রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চরফ্যাশন থেকে রাজধানীতে আসা রুমা ও তার ছেলে চরম বিপাকে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস, মহিউদ্দিন রাব্বানি
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

রাজধানীতে সমাবেশ ঘিরে ভোগান্তি, অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বিপাকে মা
সমাবেশের কারণে হাসপাতালে যাওয়ার পথে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বিপাকে মা। ছবি: ঢাকা মেইল

ভোলার চরফ্যাশন থেকে অসুস্থ সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন রুমা। ছেলেকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেলে চিকিৎসককে দেখানোর কথা ছিল। সোমবার (৩ আগস্ট) সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে সদরঘাট পৌঁছান তারা। সেখান থেকে আসেন টিএসসি। কিন্তু টিএসসি হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে পড়েন বিপাকে।

রুমাকে বহনকারী রিকশাটি শাহবাগমুখী সড়কে পুলিশ আটকে দেয়। রুমা বারবার অনুরোধ করলেও রিকশাটি যেতে দেওয়া হয়নি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে তিনি তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে রিকশা থেকে নেমে পড়েন এবং জনতার ভিড় ঠেলে হাসপাতালের দিকে হাঁটতে থাকেন।


বিজ্ঞাপন


দুর্ভোগের শিকার রুমা জানান, তিনি একা ঢাকায় এসেছেন। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বোন চাকরি করে। ফলে আগেই চিকিৎসকের সিরিয়াল নেওয়া ছিল। আর আজ সমাবেশের কথা তার জানা ছিল না। 

রুমা যখন রিকশা থেকে নামছিলেন তখন পাশে থাকা ভ্যানে খাবার ব্যবসায়ী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, আপনি কেন একা! ঢাকায় আসবেন কিন্তু আজ যে সমাবেশ এটা তো জেনেই আসবেন। এ সময় রুমার সরল জবাব ছিল—ভাই, আমরা সাধারণ মানুষ এত কিছু কি জানি! 

রিকশা থেকে নেমে তিনি বলতে থাকেন, আমি তো হাসপাতাল চিনি না।  অসুস্থ বাচ্চাটা নিয়ে এখন যাব কী করে! এত লোকজন ঠেলে যাওয়াও তো কঠিন। এ সময় তাকে বহন করে নিয়ে আসা রিকশা চালক বলছিলেন, আপা আমি তাহলে কাটাবনে নামিয়ে দেই। 

কাটাবন কোথায় আর হাসপাতাল কোথায় সেটাই তো জানি না ভাই, এ কথা শুনে রিকশা চালক অবাক হন! যদি হাসপাতালই না চেনেন তাহলে ঢাকায় একা আসলেন কেন! 


বিজ্ঞাপন


এরপর পাশে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখছিলেন এক যুবক। পরে তার কাছে গিয়ে জানতে চান কোন হাসপাতালে যেতে চান তিনি। শেষে সেই যুবক তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বাস দিলে কলিজায় পানি আসে রুমার। এরপর তাকে  অনুসরণ করে তারা শাহবাগের অভিমুখে রওনা হন। কিন্তু টিএসসি থেকে শাহবাগ আসতে ঘাম ঝড়ে যায় তাদের। শেষে প্রায় ২০ মিনিট কষ্ট করে রুমা হাসপাতালটির দুই নম্বর গেটে পৌঁছতে সক্ষম হন। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

রুমা বলেন, আমার বোনকে কল দিলাম। সে আমাকে এক নম্বর গেটে আসতে বললো। এখন ভালো লাগছে। ওই ভাইটা না থাকলে আমি হয়তো আজ এখান পর্যন্ত আসতে পারতাম না। ওই ভাইয়ের আল্লাহ ভালো করুক। 

তার আগে রুমা টিএসসি থেকে সেই যুবকের সঙ্গে রওনা হওয়ার সময় তাকে বহনকারী রিকশাকে কেন যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত ডিএমপির পুলিশ সদস্য এসআই সাগর বলেন, আমাদের কিছু করার নাই। ওপরের নির্দেশ। যদি তিনি যেতে পারেন যাক। কিন্তু যেতে তো পারবেন না।

আজ ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে শাহবাগে থাকা দুটি হাসপাতালে আসতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। টিএসসি হয়ে সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো অ্যাম্বুলেন্সকে আসতে দেয়নি পুলিশ। তাদের ভাষ্য, এ রাস্তা বন্ধ থাকবে এটা তো আগেই বলা হয়েছিল। 

তাদের বেশির ভাগ কাটাবন ও টিএসসি হয়ে আসার চেষ্টা করলে বেরিকেডে বাধা পেয়ে আসতে পারেননি। কেউ কেউ দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অনুরোধ করলেও কোনো কাজ হয়নি। বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্সগুলোও টিএসসি হয়ে শাহবাগে আসতে পারেনি। ভুক্তভোগী যেসব যান নিয়ে এসেছিলেন সেগুলো হাইকোর্ট, মৎসভবন ও কাটাবন ঘুরে হাসপাতালে আসতে হয়েছে। এমন ভোগান্তির শিকার হয়ে

কেউ কেউ বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে আবারও দুর্ভোগ শুরু হলো। এসব দেখার কি কেউ নেই! কেউ কেউ মন্তব্য করেন, সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হলে এ ভোগান্তি হতো না।

এমআইকে/এমআর/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর