আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই), বিশ্ব বাঘ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’। বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় পশু, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ‘টাইগার’ নামে পরিচিত, বাঘ সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লোগো। এসব কারণে দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। সর্বশেষ ২০২৪–এর গণনায় সুন্দরবনে ১২৫টি পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশের বাঘ নানামুখী হুমকির সম্মুখীন।
সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রকৃতি বাঘের টিকে থাকার জন্য খুবই কঠিন। নোনা পানি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নিয়মিত ঘটনা। আমাদের উচিত, সুন্দরবনে বাঘের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। বাঘের বিচরণক্ষেত্রগুলোতে হরিণের সংখ্যা কমে যাওয়ায় মাঝে-মধ্যে বাঘের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এ কারণে বাঘ নদী-খাল পেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসে। গ্রামবাসী তখন পিটিয়ে বাঘ হত্যা করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত আড়াই দশকে ২১টি বাঘের স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও পাচারকারীদের হাতে মারা পড়েছে ২৬টি। একই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে ২৪টি বাঘের চামড়া, চারটি মাথার খুলি ও ২৯৬টি হাড়। পাচারকারীদের হাতে মারা পড়া ছাড়াও সুন্দরবনসংলগ্ন লোকালয়ে এসে গ্রামবাসীর হাতে মারা পড়েছে ১৪টি বাঘ। তবে বাঘ সংরক্ষণে নেওয়া ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানে (২০১৮–২০২৭) বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লোকালয়ে এসে গ্রামবাসীর হাতে মারা গেছে গড়ে তিনটি বাঘ। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।
আরও জানা যায়, বাঘ হত্যা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধারের ঘটনায় ১৯টি মামলার মধ্যে ১০টির রায় হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলায় আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। বাকি চার মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্য ৯টি মামলা এখনো বিচারাধীন।
এসব মামলায় ৭৪ জনকে আসামি করা হলেও অধিকাংশ মামলায় অভিযুক্তরা জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই অপরাধে জড়ান বলে বন বিভাগ সুন্দরবন অঞ্চলের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে হরিণশিকারিদের তৎপরতা বেড়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের তৃতীয় বাঘ জরিপের ফলাফল গত ৮ অক্টোবর ঘোষণা করা হয়। এতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ২১টি বাঘের বাচ্চা (বাঘ শাবক) থাকলেও তা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ঘোষণার আওতায় আনা হয়নি। সুন্দরবনে ২০১৮ সালের ২২ মে’র জরিপে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। সেখানে ২০২৪ সালে সর্বশেষ ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের জরিপে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫টিতে। অর্থাৎ ৮ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে ১১টি। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে ৯টি মৃত বাঘ এবং ২টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কতটি বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে, তার পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাঘ গবেষক এম এ আজিজ বলেন, হরিণের চোরা শিকার সুন্দরবনে বাঘের প্রধান সংকট। বাঘের খাদ্যের ৭৮ শতাংশই আসে হরিণ থেকে। বাকি অংশ বন্য শূকর পূরণ করে। এ চোরা শিকার বন্ধ করতে না পারলে বাঘের খাদ্যসংকট তৈরি হবে। এছাড়া বাঘের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকট হলো সুন্দরবনের নদীগুলোর উজানে পানির প্রবাহ কমছে। ফলে সমুদ্রের লবণাক্ততা সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করছে। উদ্ভিদবৈচিত্র্য কমছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনে হরিণশিকারিদের তৎপরতা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখন আমাদের টহল দেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছি। আগে নৌকায় করে মাঠপর্যায়ের বন কর্মকর্তারা টহল দিতেন। এখন আমরা বনের মধ্যে হেঁটে টহলের ব্যবস্থা করেছি। ফলে বনের ভেতর হরিণের জন্য পাতা ফাঁদ সহজে ধরা পড়ছে। শুধু জুন মাসেই ১৪২টি হরিণ ধরার ফাঁদ জব্দ করেছে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ। এ ছাড়া ৪১ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেছেন তাঁরা।
এএসএল/ইএ

