শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সংস্কৃতির রূপ দেওয়া জরুরি: আইন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

Nazrul
‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আসিফ নজরুল।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘মানবাধিকারকে শুধু আইন বা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে একটি সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটি মানুষের চেতনায় স্থান পেলে তবেই সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আসবে।

শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গ- নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যকার দুর্বলতা আগে দূর করতে হবে। এগুলোতে সংস্কার ছাড়া বাকিটা লোক দেখানো প্রয়াসই থেকে যাবে। তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন কিংবা সেমিনার আয়োজন করে কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়, যদি মূল সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়।’

অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও আত্মসমালোচনার সংস্কৃতি গড়ে না তুললে শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।

তিনি বলেন, আমরা যদি সত্যিকার আত্মশুদ্ধির পথে না যাই, তাহলে আইন দিয়ে যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়, তা শুধু চেহারায় রূপ বদলাবে, বাস্তবে নয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহ যখন নিরঙ্কুশ হয়ে পড়ে, তখন রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদে রূপ নেয়। আমরা দেখেছি কীভাবে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে, চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। এই ভয়াবহ মূল্য অনুধাবন করতে না পারলে সমাজ-রাষ্ট্রে ইতিবাচক চেতনা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।


বিজ্ঞাপন


সেমিনারে আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়া মানবাধিকারকর্মী আহমেদ বিন কাশেম ও মাইকেল চাকমার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া নাইমা সুলতানার এবং আহত শাহরিয়ার খানের পরিবার।

মাইকেল চাকমা তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘তুলে নেওয়ার পর আমার পরিবারের মানুষ আমাকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আমার বাবার এই মানসিক ধাক্কা সহ্য হয়নি, তিনি মারা যান। পরিবার একসময় আমাকে মৃত ভেবে শেষকৃত্য পর্যন্ত সেরে নেয়। আমি ফিরলেও সেই মানসিক ভার আজও আমার ওপর চেপে বসে আছে।’

সম্মেলনে মানবাধিকার অলিম্পিয়াডে বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীকে ব্যাগ, সনদ, স্মারক ও সম্মাননা অর্থ প্রদান করা হয়।

আসিফ নজরুলের বক্তব্যে উঠে আসে রাষ্ট্রীয় সংবেদনশীলতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, এবং ফ্যাসিবাদের ভয়াল চেহারা—যা মানবাধিকার রক্ষার পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত। 

তার মতে, ‘আশাবাদই শক্তি’, তবে সেই আশার ভিত্তি গড়ে তুলতে হলে দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহি এবং নৈতিক চেতনার কোনো বিকল্প নেই।

এমআই/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর