শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জুলাই গ্যালারি উদ্বোধন: প্রতীকী ট্রাইব্যুনালে হাসিনার ফাঁসির রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

জুলাই গ্যালারি উদ্বোধন: প্রতীকী ট্রাইব্যুনালে হাসিনার ফাঁসির রায়

স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ, প্রতীকী বিচার ও রাজনৈতিক স্মৃতিচারণের এক অনন্য মঞ্চে রূপ নিয়েছে ‘জুলাই গ্যালারি’। জাগ্রত জুলাই ও জুলাই ঐক্য এর যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে এই রাজনৈতিক চিত্র প্রদর্শনী। যেখানে উঠে এসেছে গুম, খুন, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, লগি-বৈঠার তাণ্ডব, বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং সাম্প্রতিক ২০২৪ সালের হত্যাকাণ্ডসহ দীর্ঘ সময় ধরে চলা নির্যাতনের করুণ ইতিহাস।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এই গ্যালারির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। নাম দেয়া হয়েছে ‘৩৬ জুলাই’।


বিজ্ঞাপন


চলমান এই প্রদর্শনীতে শুধু অতীতের রাজনৈতিক নিপীড়নের চিত্রই নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতীকী বিচারও তুলে ধরা হচ্ছে। আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, পুরো আয়োজনের শেষ দিনে ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট), গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও সাক্ষ্যগ্রহণের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে এক প্রতীকী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যেখানে রায়ের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীকী ‘ফাঁসি’। আয়োজকদের মতে, সেটিই হবে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রথম বর্ষপূর্তির’ প্রতীকী উদযাপন।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান। যিনি নিজের গুম হওয়ার স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, এই রাষ্ট্র কতটা বর্বর হয়ে উঠেছিল, আমি নিজের জীবন থেকেই টের পেয়েছি। যারা চোখে না দেখেছেন, তারা যেন এই প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। শেখ হাসিনার সময় কেমন ছিল, তা জানতে হলে এই দেয়ালগুলোই যথেষ্ট।

মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন সদ্য বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা রাজনৈতিক কর্মী ড. ফয়জুল হক, জুলাই ঐক্যের সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী, জাগ্রত জুলাইয়ের আহ্বায়ক বোরহান মাহমুদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি।

ইসরাফিল ফরাজী বলেন, দীর্ঘ এক মাস ধরে নানা জটিলতা মোকাবিলা করে আমরা আজ এই মঞ্চ প্রস্তুত করতে পেরেছি। জাগ্রত জুলাইয়ের এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আমাদের লক্ষ্য, গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে জনগণের অভিমতকে ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত করা। সাক্ষ্য দেবে সাধারণ মানুষ, দুঃশাসনের শিকাররা। এই সাক্ষ্যই হাসিনার পতনের ভিত্তি তৈরি করবে।


বিজ্ঞাপন


আয়োজক বোরহান মাহমুদ জানান, আমরা ৩৬ জুলাইয়ের জন্য বিশেষ মঞ্চ নির্মাণ করেছি; যেখানে সরকারের ১৬ বছরের গুম, খুন, নির্যাতনের দলিল-প্রমাণ স্থান পেয়েছে। এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে, যা দু’দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তবে তরুণ প্রজন্মকে বিশেষভাবে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি এই প্রদর্শনী দেখার জন্য। কারণ ইতিহাস জানা ছাড়া সামনে এগোনো সম্ভব নয়।

তার মতে, অনেকেই শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলের কদর্যতা সম্পর্কে জানেন না। এই গ্যালারিতে একবার ঘুরলেই বোঝা যাবে কেমন নৃশংস এক সময় পেরিয়ে এসেছি আমরা।
চলমান এই আয়োজন শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে গণঅসন্তোষের শিল্পিত প্রকাশ। যেখানে ভাষণের চেয়ে বেশি বলছে দেয়ালে আঁকা ছবি, দলিল, ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন, ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র ও মৌলিক প্রতিবেদন।

‘৩৬ জুলাই’র এই ট্রাইব্যুনাল হবে নিপীড়িতদের একক ভাষ্য। যেখানে বিচারকের আসনে বসবে জনগণ এবং রায় হবে ইতিহাসের রক্তচিহ্নিত পৃষ্ঠায় লেখা আর্তনাদের প্রতিধ্বনি।

এমআই/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর