বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে সংশয়, টিপ্পনি কাটলেন প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২২, ০৮:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে সংশয়, টিপ্পনি কাটলেন প্রধানমন্ত্রী

উদ্বোধনের অপেক্ষায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যদিও এতবড় প্রকল্প নির্মাণের ঘোষণার পর দেশের একাধিক অর্থনীতিবিদসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তাই উদ্বোধনের প্রাক্কালে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন সংশয় পোষণাকরীদের কিছুটা টিপ্পনি কেটে বললেন, তাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অংশ নিয়ে তারা যেন সেতু দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যান।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা একথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর কে কি বক্তব্য রেখেছিলেন তার বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেত্রী বললেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না।’ পদ্মা সেতু হয়েছে।’

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন না করায় ঋণ পাওয়া নিয়ে সংশয়ের কথা বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান।

বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকারে ছিলাম, তিনি আমাদের অর্থ সচিব ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে বললেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে পরবর্তী ঋণ সহায়তা পাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে পড়বে। যখনই কোনো দাতা সংস্থা কোনো নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী হবে, তারা দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখবে। সরকার যদি বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে, কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।’


বিজ্ঞাপন


শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। কাজেই, যে কথা তারা বলেছে, এ কথার কোনও ভিত্তি নাই।

এ সময় বদিউল আলম মজুমদার, ড. আহসান এইচ মনসুর, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমানের দেয়া বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বদিউল আলম মজুমদার (সুজন সম্পাদক) বলেছিলেন, দুর্নীতি যে আমাদের পেছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নের ধারাকে নষ্ট করছে, এই ঘটনা তারই আরেকটি উদাহরণ। অথচ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মামলা করেও কিন্তু দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে নাই। কিন্তু তারা দুর্নীতি দেখেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ড. আহসান এইচ মনসুর, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেছিলেন ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে পারলেও শেষ করার গ্যারান্টি থাকবে না।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু শেষ করেছি, তাকেও দাওয়াত দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার বলেছিলেন, ‘নিজস্ব অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের নাই। বিএনপি কী বলেছে ওটা আমি ধর্তব্যে নিই না।… ওটা বলে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। তবে আমাদের অর্থনীতিবিদ বা বড় বড় জ্ঞানী, গুণীরা কি বলছেন, সেটাই আমি বলি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ড. সালেহ উদ্দীন, প্রাক্তন গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেছিলেন, ‘নিজ অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করার যে পরিকল্পনা করেছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে সরকার ইচ্ছা করলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবে, কিন্তু শেষ করতে পারবে না।’

‘আমি চাই তাকেও দাওয়াত দিতে। এটা যে শেষ হয়েছে তিনি যেন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে একটু যান। আমি দাওয়াত দিচ্ছি। সবাইকে দাওয়াত দেব। যারা যারা এই কথা বলেছেন, সবাইকে দাওয়াত দেব।’

আইনজীবী শাহদীন মালিকের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইনজীবী শাহদীন মালিক। উনি সব সময়ই স্বাধীন। সব সময় স্বাধীনই থাকেন এবং স্বাধীন মালিক তিনি। শাহদীন মালিক স্বাধীন কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু দেশী অর্থায়নে হবে না। সম্ভব নয়।’ 

‘কিন্তু সম্ভব হয়েছে। তাকে দাওয়াত দিচ্ছি। তিনি যেন পদ্মা সেতুতে আসেন।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডি, সম্মানীয় ফেলো। তিনি বলেছেন, এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন, যা জোগান দিতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়বে। এর দায় সরকার এড়াতে পারবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ কিন্তু এখনো ৪২ বিলিয়ন। আর বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ পড়েনি। সাথে অন্য প্রকল্পগুলো কিন্তু আমরা করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডি, সম্মানীয় ফেলো। তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু শুরু করা হলে দেশের অন্যসব অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে কাজগুলো করা যেত সেগুলো আর হবে না। সব কাজগুলো কিন্তু চলছে। কোনওটা কিন্তু থেমে যায়নি।’

বিইউ/ একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর