জুলাই গণঅভ্যুত্থান অন্যায়ের বিরুদ্ধে চিরকাল প্রেরণা জোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত গাইনি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। একইসঙ্গে অভ্যুত্থানে নারীদের ত্যাগ ও অবদান নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
সোমবার (১৪ জুলাই) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) জুলাই নারী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সায়েবা আখতার এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্বে শহীদ ডা. মিলন হলে এই সভার আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নারীরা মায়ের জাতি উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সায়েবা আখতার বলেন, মা জাতিকে আমরা যেমন ভালোবাসি, আবার অবহেলাও করি। নারীরা যাতে অবহেলিত না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। জুলাই আন্দোলনে নারীরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, অবদান রেখেছেন, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাসে আমি ঘরে বসে থাকিনি, প্রতিদিন রাস্তায় বের হয়েছি। এই গণঅভ্যুত্থান হলো নির্ভয়ে প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অফুরন্ত সাহস। এই গণঅভ্যুত্থান অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য চিরকাল প্রেরণা জুগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। নারীরা গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। ফলে বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, আজও তাদের বিচার হয়নি। অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে।
এসময় ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে উল্লেখ করে আফরোজা আব্বাস বলেন, এসব ঘটনারও বিচার হতে হবে। দেশটা সবার, তাই আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মহিলা বিভাগের সেন্ট্রাল পলিটিক্যাল উইংয়ের সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবা চৌধুরী সুইট বলেন, জুলাই বিপ্লব একটি অদ্বিতীয় বিপ্লব, যেখানে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছিল। ফলে ১৬ বছরের নিষ্পেষণ থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে, বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, ক্ষমতার পালা ঘুরিয়ে দিলাম। জুলাই বিপ্লবেও যেন তারই প্রতিফলন ঘটেছে।
এসময় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে অধ্যাপক হাবিবা চৌধুরী সুইট বলেন, বিভেদ নয়, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিস্টরা আবার মাথাচাড়া দেবে। ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাসরূপী ফ্যাসিস্টদের রুখতে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। বর্তমানের চাঁদাবাজি, ধর্ষণের মতো ঘটনা সকলে মিলে রুখতে হবে।নৈতিকতা ও নৈতিক শিক্ষার ওপর অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ভিসি অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল অসাধারণ। ফলে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। তবে এখন রণক্লান্ত হলে চলবে না। দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে ভিসি বলেন, রোগীরা যাতে উন্নত চিকিৎসা পায়, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে যাতে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলেই জুলাই শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে জুলাই বিপ্লবের পরিণত হওয়ার গল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাইয়ের চেতনা হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নবজাগরণের অফুরন্ত প্রেরণা। এই আন্দোলনে ছাত্রী, গৃহিণী ও মায়েরা অসামান্য অবদান রেখেছেন।
এসময় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত এবং শহীদদের হত্যার বিচার দ্রুত সমাপ্ত করার দাবিও জানান তিনি।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের বেদনা শুধু তারাই বুঝতে পারেন। জুলাই ছিল এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। ওই সময়ে মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। এমনকি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এবং একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে।
বিএমইউ’র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় শহীদ মো. আরিফের বাবা মো. বুলবুল কবির, শহীদ শ্রাবণ গাজীর মা শাহনাজ বেগম, চিকিৎসকদের পক্ষে অধ্যাপক ডা. জাহানারা লাইজু, ডা. ফারজানা ইসলাম রূপা, উপ-রেজিস্ট্রার সাবিনা ইয়াসমিন, ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা পাঠ করেন ডা. শাহ আজিজ। অনুষ্ঠানে জাগরণমূলক বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
এসময় বিএমইউ’র ডেন্টাল অনুষদের ডিন ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্ত, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার শফিকুল হাসান রতন, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. সাইফ উদ্দীন নিসার আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক নাছির উদ্দিন ভূঁঞা, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হুদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে বিএমইউ’র বি ব্লকের সামনে থেকে ভিসির নেতৃত্বে একটি র্যালি বের হয়।
এসএইচ/এফএ

