সকালটা ছিল রোদঝলমলে। কিন্তু দুপুরের আগেই ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় ঘন মেঘে। থেমে থেমে শুরু হয় বৃষ্টি। গরমের তীব্রতা কমলেও রাজধানীবাসীর জন্য দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ—জলজট, যানজট আর কর্মদিবসে অচলাবস্থা।
সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ আবার পুরোদিনের কাজই করতে পারেননি। বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালকসহ খেটে খাওয়া মানুষরা।
বিজ্ঞাপন
ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছে। নগরবাসীর আশঙ্কা, এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই এসব এলাকার অনেক জায়গা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
ধানমন্ডির ঝিগাতলার বাসিন্দা নিলয় জানান, সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি আর কখনো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভিজতে ভিজতে অফিসে যেতে হয়েছে। ঠান্ডা-জ্বর হওয়ার ভয় রয়েছে। নতুন রাস্তায় যেভাবে পানি জমে, তাতে এভাবে বৃষ্টি চললে কোমর পর্যন্ত পানি উঠবে।
রিকশাচালক হামিদ বলেন, বৃষ্টিতে মানুষ কম বের হয়, তাই ভাড়াও কমে যায়। রিকশা চালাতে না পারলে খাবারও জুটবে না। কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আর এমন চললে খুব বিপদে পড়ব।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, সকাল থেকে যানবাহন পেতে খুব কষ্ট হয়েছে। এর মধ্যেই আবার রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট।
বিজ্ঞাপন
মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে যাত্রা করা এক যাত্রী জানান, বৃষ্টির কারণে এত যানজট ছিল যে শাহবাগেই থেমে যেতে হয়েছে। সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল চালক জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে রাইড করছি। আজও ভাড়া পাচ্ছি না, আর শরীরটাও খারাপ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর এই সময় এমন সমস্যায় পড়ি। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট নদীর মতো হয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। সিটি করপোরেশন শুধু আশ্বাস দেয়, কাজের কাজ কিছুই করে না।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্য দেখা দিয়েছে। ফলে বৃষ্টিপাত কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি হলেও রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থা, সড়ক নালার দুরবস্থা, আর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট—সব মিলিয়ে এই বর্ষা আবারও নগরের ব্যর্থ ব্যবস্থাপনার চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
এমএইচএইচ/এইউ

