ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ, ক্লান্ত ও কংক্রিটের নগরে হঠাৎই যেন আবির্ভূত হয়েছে একখণ্ড বন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পুরোনো প্রাঙ্গণ জুড়ে এখন চলছে জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২৫। এই মেলাকে শুধু বৃক্ষ বিক্রির একটি বার্ষিক আয়োজন বললে ভুল হবে। এটি হয়ে উঠেছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ার নতুন এক মাধ্যম, গাছের পাতায় পাতায় লেখা এক নিঃশব্দ ভালোবাসার কবিতা।
গত ২৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে পুরো একমাস, অর্থাৎ ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত এই আয়োজন যেন এই ধূসর শহরের বুকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে সবুজের এক নিঃশব্দ উৎসব হিসেবে।
বিজ্ঞাপন
শেরেবাংলা নগরের সেই পরিচিত মাঠে পা রাখতেই মনে হবে ঢাকার বুকে এটি এক ভিন্ন বৃক্ষের শহর। গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই বাতাস বদলে যায়, গন্ধ বদলে যায়, বদলে যায় অনুভবও। ফুল, ফল, বনজ, ঔষধি, ইনডোর, ক্যাকটাসসহ শতশত রকম গাছের মেলা বসেছে এখানে। কেউ কিনছেন ছাদবাগানের জন্য ফলের গাছ, কেউ ছোট্ট বারান্দার কোণে রাখবেন বলে নিয়েছেন বনসাই, কেউবা স্রেফ শখে কিনেছেন অর্কিড। চারদিক জুড়ে গাছেদের রাজত্ব। সেই রাজ্যে মিশে আছে মানুষ, মিশে গেছে স্বপ্ন।
মেলায় এবার অংশ নিয়েছে মোট ১৩৩টির অধিক স্টল। সরকারি বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত নার্সারি, সামাজিক উদ্যোগ, স্কুলের পরিবেশ ক্লাব— সবাই নিজ নিজ উদ্ভাবন ও গাছের সমাহার নিয়ে হাজির। কেউ এনেছেন দুর্লভ বিদেশি গাছ, কেউ নান্দনিক বনসাই, কেউবা পরিচর্যার সরঞ্জাম ও জৈব সার।

মেলায় আসা মানুষজনের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, এটি কেবল কেনা-বেচার স্থান নয়, বরং এক মানসিক প্রশান্তির জায়গা। অনেকে শুধু সবুজের মাঝে বিনোদনের জন্যও এখানে আসছেন।
বিজ্ঞাপন
শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ আফিয়া রহমান বলেন, ভাড়া বাসায় থাকি। গাছ লাগানোর তেমন গাছ নাই। তবে দুই-একটা বনসাই কিনব। আর মূলত এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যই এসেছি।
তরুণ কবির হাসান বলেন, একটা ক্যাকটাস কিনলাম। অফিসের ডেস্কে রাখব। জীবনের রুক্ষতার ভেতর একটু সবুজ শান্তির জন্য হলেও গাছ কেনা দরকার।
বৃক্ষমেলায় পরিবারের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতি ও দুরন্তপনাও বেশ উপভোগ্য। তারা কখনো গাছের গন্ধ নিচ্ছে, কখনো চারা হাতে নিয়ে ঘুরছে, আবার কখনো মাটির টব বেছে নিচ্ছে রঙ দেখে।
পরিবারের সঙ্গে আসা এমন এক শিশু তাফসির আহম্মেদ। সে বলে, বাসার চেয়ে এখানেই অনেক ভালো লাগছে। যদি এখানেই থেকে যেতে পারতাম। অনেক অনেক সুন্দর জায়গা এটা।
নার্সারি মালিকরা জানান, বেচাবিক্রি এখনও তেমন জমে উঠেনি। মহানন্দা নার্সারির বিক্রেতা কেয়া আক্তার বলেন, ক্রেতারা আসছেন। বেচাবিক্রিও হচ্ছে। তবে আর কিছুদিন পর বেচাবিক্রি আরও জমে উঠবে। পছন্দ হলে দাম-দর নিয়ে তেমন বাঁধছে না।
এমআই/এফএ

