শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

খেলতে গিয়েছিল সন্তান, খুঁজতে বেরিয়ে আর ফেরেননি বাবা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

Masud
ছবির বামে এক ছেলের সঙ্গে শহীদ মাসুদ, ডানের ছবিতে তার তিন ছেলে সন্তান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মেরাজনগরে হাসিনার পেটোয়া বাহিনী যুবলীগের গুলিতে নিহত হন মো. মাসুদ। গত বছরের ১৯ জুলাই খেলতে যাওয়া সন্তানকে খুঁজতে বেরিয়ে আর ফেরেননি তিনি। ঘাতকের বুলেট তাকে পাঠিয়ে দেয় পরপারে। 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর মেরাজনগরে ব্লক বি মসজিদ এলাকায় চারিদিকে ব্যাপক গোলাগুলি চলে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে এবং সাধারণ জনতা কাজকর্ম ফেলে যার যার বাড়িতে আশ্রয় নেন। 


বিজ্ঞাপন


ওইদিন মাসুদও নিজের বাড়িতেই ছিলেন। এসময় তার সন্তানেরা বারবার বাইরে খেলতে যাওয়ার বায়না ধরে। তাদেরকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ঘরবন্দি রাখার চেষ্টা করেন স্ত্রী হেনা বেগম। একপর্যায়ে মেজ ছেলে মারুফ (৯) বিকেল হওয়ায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ভয় ডর ফেলে তাকে খুঁজতে যান মাসুদ।

সূত্র জানায়, সে সময় মসজিদের পাশের গলিতে যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রামদা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছিল। এছাড়া তারা বড় বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পথচারীদের দিকে গুলি তাক করে রেখেছিল। এ সময় রাস্তা পার হয়ে গলিতে প্রবেশ করছিলেন মাসুদ। হঠাৎই একটি গুলি এসে তার কপালে বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।

ঘটনার পরপরই মাসুদের সেজ ভাই শরীফের কাছে স্থানীয়দের ফোন আসে। ‘আপনার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে।’ তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়েন শরীফ। ছোট ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ বুকে জড়িয়ে দ্রুত নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থা বেগতিক দেখে সিটি স্ক্যান করেন চিকিৎসকরা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মাসুদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। নিস্তেজ হয়ে যান তিনি। রাত ১টার দিকে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে।

মেডিকেল সনদে উল্লেখ করা হয়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মাসুদ মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মরদেহ মেরাজনগর নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। স্বামীর রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখে মুহূর্তে প্রাণ যাওয়ার উপক্রম হয় স্ত্রী হেনা বেগমের। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। এরপর মাসুদের জানাজা শেষে তাকে মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


জুলাইয়ের শহীদ মাসুদ স্ত্রী ও তিন ছেলে সন্তান রেখে গেছেন। বড় ছেলে মো. মাহফুজ চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী, মেজ ছেলে মারুফ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে এবং ছোট ছেলে মাশরাফি হিফজ মাদরাসার ছাত্র।

টিএই/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর