শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে: প্রধান উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

younus
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল ফ্যাসিবাদের বিলোপ ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এই কথা বলেন। এদিন বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই শহীদ এবং আন্দোলনে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের স্মরণ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রতি বছর এই সময়কালটা উদযাপন করব যাতে পরবর্তী সময়ে ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয় আবার এই অভ্যুত্থানের জন্য। আমরা প্রতি বছর এটা করব যাতে কোনো স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিনাশ করতে পারি সেটার জন্য, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।

আরও পড়ুন

অগ্নিঝরা জুলাই, এক বছরেও হয়নি শহীদ-আহতদের চূড়ান্ত তালিকা

সরকারপ্রধান বলেন, আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, এক জনতার জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল— ফ‍্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।


বিজ্ঞাপন


Younus2

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকে আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি। এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল তাৎক্ষণিক যেটা টার্গেট ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন- নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

ড. ইউনূস বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু- বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের—যারা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। আমরা আজ মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুই স্মরণ নয়, বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল আমরা চাই এই জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক।

আরও পড়ুন

জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আদায় করে ছাড়ব: নাহিদ ইসলাম

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য— জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এই সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না।

Younus3

ড. ইউনুস বলেন, আসুন, এই জুলাই মাসকে পরিণত করি গণজাগরণের মাসে; ঐক্যের মাসে। এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করব যে লক্ষ্যে আমাদের তরুণ ছাত্ররা, জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আবার নতুন করে শপথ নেব- এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে। এবং এটা আমরা প্রতি বছর করব, যাতে স্বৈরাচার আবার কোনোরকমে মাথাচাড়া দিতে না পারে।

আরও পড়ুন

বিএনপির জুলাই উদযাপন কমিটিতে আ.লীগ ঘরানার লোক!

সরকারপ্রধান বলেন, জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচি সফল হোক। এর মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য আমাদের সর্বমুখী হোক, অটুট হোক এই হোক আমাদের এই অনুষ্ঠানমালার লক্ষ্য। এই লক্ষ্য সামনে রেখে আমি জাতির পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। সবাইকে এই অনুষ্ঠানে সকল উদ্দীপনা নিয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর