আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলের মধ্যে ঘোরাফেরা করলেও সিদ্ধান্ত এখনো অস্পষ্ট। তারই মাঝে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের মধ্যকার বৈঠক ঘিরে কৌতূহল বেড়েছে সবার মনে।
তবে এ বৈঠকের ফলে আগামীতে নির্বাচনের অনেক বিষয় দৃশ্যমান হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সেটিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ উল্লেখ করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে। কিন্তু বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। মুখ খোলেননি সিইসিও।
আলোচিত এ বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটা অনেকটা সৌজন্য সাক্ষাৎ। সেখানে নির্বাচনের জন্য যে কার্যক্রমগুলো করতে হয়, সেগুলোর অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। সৌজন্য সাক্ষাৎ হতেই পারে। তারা যদি মনে করেন বৈঠকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যা জনস্বার্থে জনগণকে জানানো দরকার, তাহলে নিশ্চয়ই জানাবেন। আর তা জানানো উচিত। আর যদি সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়, তাহলে এটা তাদেরই সিদ্ধান্ত, তারা জানাবেন কি জানাবেন না।’
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ বৈঠকের বিষয়টি খোলাসা হবে বলেও তিনি মনে করেন।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ সামগ্রিকভাবে আমার মনে হয়, টাইম হ্যাজ কাম, নির্বাচন কমিশনের অবস্থানটা পরিষ্কার করার। নির্বাচন কমিশনই এখন বলতে পারে সরকারকে যে, নির্বাচনটা তারা ফেব্রুয়ারিতে পারবে নাকি এপ্রিলে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই সঠিক তথ্য দিতে পারবে সরকারকে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিভাবে দুটি উদ্দেশে আলোচনাটা হয়েছে বলে মনে হয়, সরকারের দিক থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটা কী, একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিটাও অবহিত করবে সরকারকে। যেহেতু এখনো সিদ্ধান্তটা নির্বাচন কমিশন জানায়নি, এখন তো আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে, সিইসি কিছু প্রকাশ করেন কি না।’
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা পরিষ্কার করার কথা উল্লেখ করে শুক্রবার (২৭ জুন) গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিককের নানা প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘গতকাল আশা করেছিলাম হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে অথবা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে প্রেসকে কিছু জানানো হবে। কী বিষয়ে আলাপ হলো, কী বিষয়ে বৈঠক হলো। যদি উভয় পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয় জাতির সামনে, তাহলে আমরা আশস্ত হবো।’
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’
এরপর এক সপ্তাহ না পেরুতেই গত ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
এর দুই দিন পর (১৫ জুন) সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের যে সময়েই নির্বাচন হোক না কেন, আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সরকার আলোচনা করছে, আলোচনার অগ্রগতি, ভিত্তি কী, চিন্তাভাবনা, আমাদের বুঝতে হবে। সরকারের সঙ্গে আমাদের যখন কথাবার্তা হবে, কী ধরনের চিন্তাভাবনা করছে, তখন আমরা ধারণা পাবো, তখন সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে সিইসির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
এমএইচএইচ/এএইচ