দেশের সকল ধর্মের মানুষ নিঃসংকোচে ও নির্ভয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি আরও জানান, ‘বর্তমান সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে।’
শুক্রবার (২৭ জুন) ধামরাইয়ে যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ধামরাই রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টা আট দিনের এই রথযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আগের চেয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে এবং সাধারণ জনগণের সহযোগিতা পেলে এটিকে আরও সন্তোষজনক পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের বৈষম্য আর অনিয়ম দূর করে দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ সরকারের মূল লক্ষ্য। সংস্কারের মাধ্যমে এসব অনিয়ম ও বৈষম্য দূর করতে হবে। সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। সে জন্য সকলকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করেন। একইসঙ্গে তিনি এসব আন্দোলনে যারা আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘তাদের আত্মদানে উন্মোচিত হয়েছে শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও সাম্যের এক নতুন বাংলাদেশ।’
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকে রথযাত্রা অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এই রথযাত্রা পালিত হচ্ছে সুদীর্ঘকাল ধরে। এই অনুষ্ঠানটি আমাদের দেশে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা হিসেবে পরিচিত।’
কিন্তু ধামরাইয়ের রথযাত্রাটি যশোমাধবের রথযাত্রা হিসেবেই সবাই জানে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, ‘এর কারণ হিসেবে জানতে পেরেছি, একই দেবতার বিভিন্ন নামের কারণে রথযাত্রা অনুষ্ঠানের এই একাধিক পরিচিতি। নাম যা-ই হোক, আমাদের দেশে এই অনুষ্ঠানটি পঞ্জিকা অনুসরণ করে আষাঢ় মাসের একটি নির্দিষ্ট তিথিতে সর্বত্র অনুষ্ঠিত হয়।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমান কাল ধরে এ দেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশার মানুষ পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রেখে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। রথযাত্রা হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এ উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা-ধনী-গরীব নির্বিশেষে অনেক দর্শনার্থী আসেন এবং অনুষ্ঠানে শরিক হন।’
‘এটি এ ভূখণ্ডের মানুষের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন। রথের মেলায় এসে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা আনন্দ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই জাতীয় অনুষ্ঠানের মূল শিক্ষা সাম্যের বাণী প্রচার করা।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রায় চারশ বছর ধরে চলা এই অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে আমাদের ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এটি আপনাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি বিষয়।’
এএইচ