শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

শহর থেকে গ্রাম লোডশেডিং সর্বত্র, বৃষ্টি-গরমে ভোগান্তি চরমে

মহিউদ্দিন রাব্বানি
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৫, ১১:১৭ এএম

শেয়ার করুন:

loadshading bangladesh
লোডশেডিংয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করছে এক শিক্ষার্থী। প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভুগছে মানুষ। বিশেষ করে শহরের তুলনায় গ্রামে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। এতে জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি শুরু হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। ফিরতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা। 

রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় খবর নিয়ে এসব তথ্য জানা যায়। 


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ঠিক আছে। লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, বিভিন্ন সময়ে যান্ত্রিক ত্রুটি ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলছেন, একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে লোডশেডিং। এমন যন্ত্রণায় হাঁসফাঁস অবস্থা। তারা বলছেন, শহরকেন্দ্রিক লোডশেডিং কম হলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে লোডশেডিং বেশি। বৃষ্টি হওয়ার আগ মুহূর্তে বিদ্যুৎ চলে যায়। কখন আসে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। বিদ্যুৎ অফিসের দেওয়া নাম্বারে ফোন দিয়েও তাদের পাওয়া যায় না। 

রাজধানীর গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা রহমত আলী জানান, সন্ধ্যা হলে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যায়। আবহাওয়া ভালো কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাট জানা নেই। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বাচ্চাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। 


বিজ্ঞাপন


নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে প্রতিদিন চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যায়- এমন অভিযোগ করেছেন সেখানকার বাসিন্দা জ্যোৎস্না আহমেদ। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, কোরবানির আগে তেমন লোডশেডিং দেখা যায়নি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে লোডশেডিং অনেক বেশি বেড়েছে। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। গরমে জানলা-দরজাও খোলা যায়। কারণ মশার ভয়ে সন্ধ্যার আগেই জানালা-দরজা লাগিয়ে রাখতে হয়। 

তবে রাজধানীর তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ে মাত্রা আরও বেশি। কোথাও কোথাও দিনের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে কখনও কখনও ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়। 

চট্টগ্রামের ফটিকছাড়ি থেকে একজন গ্রাহক লোডশেডিংয়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘কিছু হওয়ার আগেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। একটু বাতাস, একটু বৃষ্টি হলেই লাইন বন্ধ। আজকাল তো এমন অবস্থা হইছে- একটু রোদ পড়লেই লাইন নাকি হিট হয়ে যায়! আমাদের জোরালো প্রতিবাদ না থাকায় তারা এসব করে যাচ্ছে।’

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম ঢাকা মেইলকে জানান, সন্ধ্যা হলেই লোডশেডিং শুরু হয় রোজ। মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। পড়াশোনার জন্য চার্জ লাইট কিনেছেন। 

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একাধিক গ্রাহক জানান, লোডশেডিংয়ে দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে ভৈরববাসীর জনজীবন। তারা জানান, সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টানা ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় ভোগান্তির শিকার হন কয়েক শ সেবাগ্রহীতা। সেখানে বকেয়া বিল থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভৈরব পিডিবি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে চার ঘণ্টা পর পুনরায় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন-

এবারও গ্রীষ্মে ভোগাবে লোডশেডিং

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বর্ষাকালে গাছপালা উপড়ে পড়ার কারণে বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তারা আরও জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মেও দুর্ভোগ হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুতায়নের আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির উন্নয়ন বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থায়িত্ব আনতে পারে। তাদের মতে, বিদ্যুৎ লাইনের সংস্কার, গাছপালা কর্তন এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যা কাটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) জহিরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদা সমান রয়েছে, আপাতত কোনো ঘাটতি নেই। তবে লোডশেডিংয়ের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।”

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এই সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। যদি সবাই একত্রিত হয়ে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে, তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের এই অসুবিধা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারা ছিল ১৩ হাজার ২৭০ মেগাওয়াট। তবে সেসময় সারাদেশে চাহিদা দেড় হাজারের বেশি থাকার কথা। ফলে বাকি চাহিদা লোডশেডিং করতে হয়। 

বিতরণকারী সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) প্রধান প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, বিদ্যুতের তেমন ঘাটতি নেই। আমার দায়িত্বে এরিয়াতে সমস্যা হচ্ছে না। যেসব এলাকায় সমস্যা হচ্ছে তা যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত গোলযোগের কারণে হতে পারে। 

এমআর/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর