চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। একইসঙ্গে আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনা যেন আরও সুশৃঙ্খল ও ত্রুটিমুক্ত হয়, সে লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নিজের সরকারি বাসভবন যমুনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে তার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনায় সন্তোষজনক অগ্রগতি হলেও কিছু ছোটখাটো ত্রুটি ধরা পড়েছে, যেগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য হজ-সম্পর্কিত সব পর্যায়ে আগেভাগে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার ওপর জোর দেন তিনি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সময়োপযোগী উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, হজ রোডম্যাপ আগেভাগে প্রকাশ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও যথাযথ গতি ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে হবে।
সেই সঙ্গে হজযাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রশিক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার মতে, সুশিক্ষিত ও সচেতন সেবাদানকারীরাই হজযাত্রীদের জন্য নির্বিঘ্ন হজ নিশ্চিত করতে পারেন।
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, হজ ২০২৬-এর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং এর রোডম্যাপ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই বাংলাদেশের হজ কোটা ঘোষণা করা হবে। এরপর ধাপে ধাপে হজযাত্রা বিষয়ক কার্যক্রম এগিয়ে যাবে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক চলতি বছরের হজ পরিচালনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, এবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে সুপরিকল্পিতভাবে হজ আয়োজন করা হয়েছে।
হজ ২০২৬ সফল করতে সৌদি সময়ানুসারে কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ ক্যালেন্ডার ও চেকলিস্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। কোটা পূরণ, নিবন্ধন, সেবা সংস্থার চুক্তি এবং ফ্লাইট পরিচালনাসহ প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি হজ পালনের সুযোগ পান। তাদের মধ্যে অনেকেই ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সক্ষম হন। অ্যাপটিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৩০ হাজারেরও বেশি হজযাত্রী।
হজ চলাকালে এ বছর ৩৮ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ২৪ জন। ২৫ জুন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৫১ হাজার ৬১৫ জন হজযাত্রী। হজ চলাকালে মোট ৮০৬টি লাগেজ হারানোর অভিযোগ পাওয়া গেলেও এর মধ্যে ৭৯০টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট ১৬টি লাগেজ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
তিন বছর ধরে হজযাত্রী পাঠাতে না পারায় ৪১৫টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ধর্ম সচিব। তিনি বলেন, সরকারের কঠোর অবস্থান হজ ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনবে।
সভায় আরও জানানো হয়, আগামী ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে। ১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে সেবাদানকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হবে এবং ৪ জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে কোয়াটেশন অনুমোদন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর ২০ মার্চ থেকে হজযাত্রীদের ভিসা প্রদান এবং ১৮ এপ্রিল থেকে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হবে। সবশেষে ২৯ মে ২০২৬ তারিখে হজ সেবার মান যাচাইয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ‘টেস্ট’ পরিচালিত হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, লাব্বাইক অ্যাপ যেন ভবিষ্যতের হজযাত্রীদের তথ্য ও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, সে ব্যবস্থা এখন থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে ওমরাহ পালনেও এই অ্যাপ যেন প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
চলতি বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও জনবান্ধব করে তুলতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সভায় উপস্থিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এমআই/এএইচ

