সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নির্বাচনি প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না পোস্টার: আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

election commission
সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল মো. সানাউল্লাহ। 

ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিধান রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। খসড়া অনুযায়ী পোস্টার ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট বিতরণ করতে পারবেন প্রার্থীরা। আর নির্বাচনের প্রচারের জন্য সময় তিন সপ্তাহ। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সপ্তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল মো. সানাউল্লাহ। 


বিজ্ঞাপন


প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে তার সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

মো. সানাউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীর আচরণবিধি সংক্রান্ত... এখানে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়গুলো এসেছে নতুনভাবে, প্রথমত হচ্ছে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওর ধারা ৯১ (ঙ) যেটা আছে প্রার্থিতা বাতিল করা। এটা ইতোপূর্বে আচরণবিধিতে সন্নিবেশিত ছিল না এটাকে সন্নিবেশ করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না এটা ইন করা হচ্ছে। পোস্টার ব্যবহার বাদ করতে সংস্কার কমিশনেরও একটা প্রস্তাব ছিল। আমরাও একমত হয়েছি। ব্যানার ফেস্টুন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইত্যাদিগুলোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে যারা বিবেচিত হন সেখানে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদেরকেও যোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ফ্যাসিলিটির ব্যবহার যেমন সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো, রেস্ট হাউস এটার ওপরে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিবেশ বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে যে প্রচার প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-

নির্বাচনি প্রচারে টিশার্ট, জ্যাকেটের ব্যবহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে যে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল, এটার ব্যাপারে একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে। 
তিনি বলেন, আর্মসের যে সংজ্ঞা ছিল সেই সংজ্ঞার মধ্যে অর্থাৎ অস্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে দেশীয় অস্ত্র শামিল করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরে বিশদভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে ডিফাইন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কী করা যাবে ও করা যাবে না সেটি নির্ধারণ করা হয়েছে।  শব্দের ব্যবহারে আমরা আগে যেমন শব্দের মাত্রার ওপরে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না, সেটাকে জাতিক মান ৬০ ডেসিবল পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রচার তিন সপ্তাহই থাকবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্যরা প্রার্থী হলে তাদের পদত্যাগ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্য হিসেবে যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থী যদি থেকে থাকেন তাহলে নির্বাচনে তিনি যখন প্রার্থিতা লাভ করবেন তার আগেই তাকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাই প্রিজাইডিং অফিসার পোলিং অফিসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকেন। এবং এটা সংস্কার কমিশনেরও একটা সুপারিশের মধ্যে ছিল। সরকারি ব্যক্তি, সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রপার্টি ইত্যাদি ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করা হয়েছে। 

‘সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কোনো ধরনের ফরেন ইনভেস্টমেন্টকে ‘না’ করা হয়েছে। কমনভাবে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে সব প্রার্থী যাতে ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন বা করেন সেটার বিধান করা হয়েছে। সংলাপে অংশগ্রহণের ব্যাপারে যে বিষয়টি আছে যে বিভিন্ন মিডিয়াতে যে সংলাপের আয়োজন হয়ে থাকে এটাকে সম্মতি দেয়া হয়েছে। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী বিধিমালা লঙ্ঘনে ছয় মাস কারাদণ্ড বহাল রাখলেও জরিমানা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা করা হয়েছে। অঙ্গীকারনামা নতুনভাবে সংযোজিত করা হয়েছে এই বিধিমালা মেনে চলার ব্যাপারে এটাই দল এবং প্রার্থী উভয়ের।’

খসড়া চূড়ান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হলো। তবে মনে রাখতে হবে যে আচরণ বিধিমালার অনেকগুলো পরিবর্তন বা সংশোধন এটা আরপিওরওপর নির্ভরশীল। সুতরাং বর্তমানে যে এটা চূড়ান্ত হলো এটা প্রকাশিত হয়ে যাবে আমাদের ওয়েবসাইটে উপরে লেখা থাকবে আরপিও সংশোধন সাপেক্ষে।

পোস্টার কি একেবারে থাকবে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পোস্টার আমরা রাখছি না। ব্যানার আছে, ফেস্টুন আছে। বিলবোর্ড নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া আছে, লিফলেট আছে, হ্যান্ডবিল আছে এগুলো সব আছে শুধু পোস্টার নাই।

বান্যারে ছবি লাগানোর বিষয়ে কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রার্থীর বাইরে কোনো ছবি দেওয়া যাবে না। যেহেতু এটা ডিজিটাল সেখানে হয়তোবা কালারের ওপর আমরা নিয়ন্ত্রণটা রাখতে পারব না। বাকি সবখানে সাদা-কালোর যে বিধান ছিল সেটা থাকবে।

প্রার্থী ও দলের অঙ্গীকারনামার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল এবং প্রার্থী উভয় একটা হলফনামা দেবে যে এই যে আচরণবিধি তারা মেনে চলবেন।

নির্বাচনের আগে আগ্নেয়াস্ত্র-দেশীয় অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়া দেশীয় অস্ত্র জমা দেওয়া এক জিনিস নয়। ব্যবহার এক জিনিস আর জমা দেওয়া এক জিনিস। আগ্নেয়াস্ত্র হচ্ছে যেগুলো আপনার লাইসেন্স আছে। লাইসেন্সকৃত অস্ত্র সেগুলো আপনি জমা নেন। আর দেশীয় অস্ত্র হচ্ছে একজন একটা ভোতা দাও কিন্তু দেশীয় অস্ত্র হতে পারে। কিন্তু এটা তখনই অস্ত্রে রূপান্তরিত হয় যখন এটা নিয়ে আপনি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছেন। 

কমন প্লাটফর্মের বিষয়ে তিনি বলেন, কমন প্লাটফর্ম বলতে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম থেকে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করা।

আপনারা বলছেন যে সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ আমলে নিয়েছে। কিন্তু সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি সেক্ষেত্রে যদি পরিবর্তন আসে তখন আপনারা কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এটা হচ্ছে খসড়া আচরণবিধি। এটাকে কমিশন আজকে অনুমোদন দিয়েছে। এটার ওপরে যে আরপিওর সংশোধনের বিষয় আছে আবার রাজনৈতিক কনসেন্সাসের ভিত্তিতে যদি কিছু পরিবর্তন সংশোধন হয় সেটাও করতে হতে পারে। সুতরাং এটা খসড়া আকারেই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নীতিগত অনুমোদন দিয়ে পোস্ট করে দিব দলের মতামত প্রয়োজন হতে পারে হতে পারে। আমরা তো ডিসকাশন তো একটা চলমান প্রক্রিয়া এমনও হতে পারে যে আপনার বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার সাথে আলোচনা করার পর  নতুন নতুন উপাত্ত আসতে পারে।

এমএইচএইচ/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর