সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সংবাদপত্রের কালো দিবস, কী ঘটেছিল পঁচাত্তরের এই দিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

paper
চারটি রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

দেশে পালিত হচ্ছে সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালীন আওয়ামী বাকশাল সরকার সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করে দেয়। এতে সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার সংবাদকর্মী রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। শেখ মুজিব সরকারের ন্যাক্কারজনক হস্তক্ষেপের ফলে রুদ্ধ হয়ে যায় গণমাধ্যম, রাজনৈতিক, গোষ্ঠীগত ও বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা। সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত।

সরকারের এমন নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশ জারির দিনটিকে ১৯৭৬ সাল থেকে সাংবাদিক সমাজ সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দিবসটি নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে।


বিজ্ঞাপন


এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে আজ সোমবার (১৬ জুন) এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিক নেতারা ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে সাংবাদিক নেতারা বাণী দিয়েছেন।

জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছর পর সংসদে আনা হয়েছিল সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এই সংশোধনীর ফলে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের জগদ্দল পাথর। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ১৬ জুন বিতর্কিত বাকশাল সরকার সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশ করা হয়। এতে সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার সংবাদকর্মী বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনযাপনে বাধ্য হন। সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি। এজন্য সাংবাদিক সমাজ প্রতি বছর এ দিনটিকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সাথে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। যদিও বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করতে পারেননি সাংবাদিকরা।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে সিপাহি-জনতার বিপ্লবে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সংবিধানে জনগণের কাঙ্ক্ষিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে বাকশাল সরকারের সব প্রকার অগণতান্ত্রিক কালো ধারা বাতিল এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

আরও পড়ুন

ভারতীয় মিডিয়ার ভাঁড়ামো, গুজব ও মিথ্যাচার: বাংলাদেশের করণীয়

ভুল সংবাদ পরিবেশন করলে ব্যবস্থা: উপ-প্রেস সচিব

তবে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে- তখনই সংবাদমাধ্যমকে টার্গেট করেছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে মতায় এসেও একই পথ অনুসরণ করে দলটি। বিগত ১৬ বছরে জনপ্রিয় অনেক সংবাদপত্র, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে শত শত সংবাদকর্মীকে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দেয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের কালো থাবায় সংবাদমাধ্যম ছিল পুরোপুরি শৃঙ্খলিত। সরকারের রক্তচক্ষুর সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। অকল্পনীয় হুমকির মুখে পড়ে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা।

সাগর-রুনিসহ অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে অগণিত গণমাধ্যমকর্মীকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নানা কালাকানুন করে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ ও কণ্ঠরোধ করা হয়। অপরদিকে এক শ্রেণির দলীয় সাংবাদিক সরকারের তোষামোদিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন নিরপেক্ষতা হারায়। ফলে গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। তবে এখনো অনেক গণমাধ্যমে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা বহাল তবিয়তে থেকে অপতথ্য পরিবেশন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ না থাকায় অনেক গণমাধ্যম স্বপ্রণোদিত হয়ে তোষামোদিতে নেমেছে। এ ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে ‘ভিউ ব্যবসার’ কারণেও ভুল তথ্য পরিবেশন করছে কোনো কোনো অনলাইন মাধ্যম। এ কারণে সংবাদপত্রের প্রতি জনমনে এখনো পুরোপুরি আস্থা ফেরেনি, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

এসএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর