বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতীকসহ নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ করতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংশ্লিষ্ট ইসি কর্মকর্তা জানান, ঈদের ছুটির আগে আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গেজেট প্রকাশের জন্য সবকিছু তৈরি করে রেখেছিলাম। যাতে প্রথম কর্মদিবসে নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ করতে পারি। তবে জামায়াতের দাবি তাদের যেন প্রতীকসহ নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ করা হয়। এজন্য একটু সময় লাগবে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তাদের নিবন্ধন ফেরত দেওয়ার। আর তাদের যে প্রতীক ছিল সেটি আমরা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে তাদের যে প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ তা আমাদের যে নির্বাচনি প্রতীকের তালিকা রয়েছে সেখানে কিন্তু নেই। তালিকায় আনার জন্য দাঁড়িপাল্লাসহ আরও কিছু প্রতীক যুক্ত করে আমরা একটি বিধিমালা করে শীঘ্রই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।
এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, শুধু নিবন্ধনের গেজেট তো আমরা দিয়ে দিতেই পারি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ও প্রতীক একসঙ্গে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে দুটি একসঙ্গে দিতে গেলে একটু সময় লাগবে।
>> আরও পড়তে পারেন
জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে ইসিকে নির্দেশ আপিল বিভাগের
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থা অনুবিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, নির্বাচনের জন্য বর্তমানে যে ৬৯টি তফসিলভুক্ত প্রতীক রয়েছে তার মধ্যে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নেই। এ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ আরও ৩১টি নতুন প্রতীক যুক্ত করার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। প্রতীকের সংখ্যা ১০০টি বা এর বেশি বা কম হতে পারে তবে আমরা প্রতীকের সংখ্যা বাড়াব।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ১৯৮৬ সাল থেকে নির্বাচনেই দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিল জামায়াত। এরপর ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধান চালু করে। এরপরে ২০০৮ সালে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামী। এরপর দলটির গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। এরপর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। তবে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। এ রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। ওই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। তবে জামায়াতের আইনজীবীর অনুপস্থিত থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
এর মাঝে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে এক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে এবং কাউকে প্রতীক দিয়ে থাকলে তা বাতিল করতে চিঠি দেয়। নির্বাচন কমিশন সেই চিঠির প্রেক্ষিতে প্রথমে স্থানীয় নির্বাচন ও পরে ২০১৭ সালে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি বাদ দিয়ে দেয়। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির নিবন্ধন সনদও বাতিল করে ইসি।
অন্যদিকে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকার অঙ্গসংগঠনসহ দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে সরকার পতনের পর ২৮ আগস্ট জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আগের নির্বাহী আদেশ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার।
>> আরও পড়তে পারেন
জামায়াত নিবন্ধন ফেরত পেলেও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক পাবে কীভাবে
এরপর ২০২৩ সালে খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবনের (রিস্টোর) জন্য আবেদন করে জামায়াত। গত ২২ অক্টোবর বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য পুনরুজ্জীবনের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এরপর কয়েক দফা শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বাতিল করেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আদেশে বলেন, দলটির ক্ষেত্রে পেন্ডিং (অনিষ্পন্ন) গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন ইস্যু এবং অন্য কোনো ইস্যু যদি থেকে থাকে, তা সাংবিধানিক ম্যান্ডেট পুরোপুরি প্রয়োগ করে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেওয়া হলো।
আদালতের আদেশের বলেই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ দাবি করেছেন, ২০১৩ সালের হাইকোর্টের রায়ে পূর্বের যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থাই থাকবে। ২০০৮ সালে যেমন আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলাম, তেমনি এখনো আমরা প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা পাবো।
এমএইচএইচ/এএস

