প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে রাজধানী ঢাকা। ত্রাহিত্রাহি অবস্থা নগরবাসীর। অতিষ্ঠ জনজীবন। কষ্ট নিবারনে চাহিদা বেড়েছে ডাব ও তালের শাঁসের। চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
রাজধানীর বাজার, পাড়ামহল্লার অলিগলিতে বাড়তি তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে চাহিদা বেড়েছে পানি ও পানীয় এসব ফলের। তীব্র গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে ডাবের পানির ওপর ভরসা করেন অনেকে। তীব্র গরমে চাহিদা বেশি থাকায় বেড়েছে ডাবের দামও। পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে তালের শাঁস।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
প্রচণ্ড গরমে এসব এলাকায় ডাবের চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ডাবের দাম বেড়েছে আকাশচুম্বী হারে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি ডাবের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল, গেন্ডারিয়া, জুরাইন এলাকায় আকারভেদে প্রতিটি ডাব ১৪০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাসপাতাল এলাকাগুলোতে এই ডাবের দাম আরও বেশি। এছাড়া গরমের অপর স্বস্তিদায়ক ফল তালের শাঁস প্রতিপিস ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একেকটি তালে ৩-৪টি বিচি থাকে।
ক্রেতারা বলছেন, এমন গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে ডাবের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের জন্য ডাবের পানি পান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
জুরাইন এলাকায় ডাবের পানি খেতে আসা শফিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার জন্য রক্ত ম্যানেজ করেছি। রক্তদাতাকে ডাবের পানি খাওয়াতে এসেছি। গরমের কারণে ডাবের দাম চড়া। দুটি ডাব কিনতে কিনতে হয়েছে ৩০০ টাকায়।
যাত্রাবাড়ী এলাকার জসিম বলেন, গ্রামে আমাদের নারিকেল গাছ থাকলেও শহরে কিনে খেতে হচ্ছে। আগে ৭০-৮০ টাকায় ভালো ডাব পাওয়া যেত। এখন ১৫০ টাকার নিচে ডাব নাই৷ এইভাবে তো গরীব মানুষের শরীর ঠাণ্ডা রাখাও কঠিন হবে।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকেই ডাবের দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম, কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি।
তারা জানান, আড়ত থেকে আগে প্রতি হাজার ডাব ৫০ হাজার টাকায় আসতো, এখন সেটা ৬০ হাজার টাকার ওপরে লাগে। খরচও বেড়েছে, তাই আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে ডাবের দাম দুই সপ্তাহ ধরে ১০০টি ডাবে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে মূলত বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ময়মনসিংহ জেলা থেকে বেশি ডাব ঢাকায় আসে। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, গরমের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা। ফলে ভোক্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডাব উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিও এই দাম বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ।
তারা আরও বলেন, এই খাতে নজরদারি ও সরাসরি কৃষক-বিক্রেতা সংযোগ তৈরি করতে পারলে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজারে নজরদারির অভাব— এই তিন মিলেই গরমে ডাবের দামে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। অচিরেই পদক্ষেপ না নিলে সাধারণ মানুষের জন্য প্রাকৃতিক এই পানীয় নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।
এমআর/এফএ

