রোববার, ১৫ জুন, ২০২৫, ঢাকা

হাসপাতালের বিছানায় ভিন্ন রকম ঈদ রোগী ও তার স্বজনদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

হাসপাতালের বিছানায় ভিন্ন রকম ঈদ রোগী ও তার স্বজনদের

ঈদ শব্দটি কানে আসলে মনে হয় পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠা এক মহাকাব্য। তবে আনন্দের দিনগুলোতে হাসপাতালের বিছানায় কাটাতে হয়েছে অনেক রোগীকে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে না পারলেও হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকাদের আন্তরিকতায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন তারা। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ঈদ হয়ে উঠেছে বিষাদময়।

সোমবার (৯ জুন) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিন হাসপাতালে দেখা গেছে, হাসপাতালে স্বাভাবিকের তুলনায় রোগী ও স্বজনদের সংখ্যা কম। বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে আছেন রোগীরা। পাশে বসে আছে সন্তান, স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। যারা ছাড়পত্র পাচ্ছেন তাদের মুখে হাসির ঝলক। যারা ভর্তি হয়েছেন অনেক আগে; কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠেননি তাদের মধ্যে বিরাজ করছে এক মানসিক অশান্তি। পর্যায়েক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন ডাক্তার ও নার্সরা। সেবার কোনো রকম কমতি রাখছেন না হাসপাতালে কর্মরত সকলে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ৭ বছরের শিশু সাইদ, ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন জামার আবদার করেছিল সে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তাই আরও কয়েকদিন হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে থাকতে হবে তাকে। সাইদের মা বলেন, ছেলের সুস্থ হওয়াটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে বড় ঈদ। ঈদের দিন ওরে নতুন জামাও পরিয়ে দিয়েছি। অসুস্থতার মাঝেও তার মুখে হাসিটা দেখে আমার কাছে ঈদ মনে হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবারের আয়োজন ছিল। রোগীদের জন্য ছিল মোরগ পোলাও এবং ফলমূল রাখা হয়েছিল। অনেকে স্বজনদের সঙ্গে ভিডিও কল করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।

DMC1


বিজ্ঞাপন


নবাবপুর থেকে আসা রিকশাচালক কাশেম মিয়া ঈদের দু’দিন আগে একটি দুর্ঘটনায় পা ভেঙে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদ করতে পারব না ভেবে মন খারাপ ছিল। তবে ঈদের দিন ডাক্তাররা যেভাবে আমাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেছে তাতে আমি খুশি।

তবে সব রোগীর ঈদ কাটেনি শান্তিতে। এদিকে রাজধানীর লালবাগ থেকে এসে নিউরো সার্জন বিভাগে ঈদের একদিন আগে ভর্তি হয়েছেন আব্দুল জব্বার। রোগীর সঙ্গে রয়েছেন তার বড় ছেলে মেহেদী হৃদয় এবং তার মা। মেহেদী হৃদয় ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের আগের দিন রাতে সবাই একসঙ্গে বসে আনন্দ করছিলাম হঠাৎ বাবা বললেন পানি খাব। পানির জন্য যেই না তিনি উঠলেন সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। চোখও মেলতে পারছিলেন না। দ্রুত বাবাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে ডাক্তারা জানান ব্রেন স্ট্রোক করেছে; মাথায় রক্ত জমাট হয়েছে অপারেশন করতে হবে। পরদিনই অপারেশন করা হয়েছে। এখন আল্লাহ ভরসা। এবার ঈদটা আমার পরিবারের জন্য বিভীষিকার নাম।

সিনিয়র স্টাফ নার্স সুলভ চন্দ্র দাস ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের সময় রোগীর চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কম। আমরা যারা নার্স বা স্টাফ আছি তার বেশিরভাগই নন-মুসলিম। চাইলে ঈদের ছুটি পেতাম কিন্তু আমাদের মুসলিম সহকর্মী যারা রয়েছেন ঈদ তাদের জন্য একটি পবিত্র দিন। এজন্য আমরা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করছি।

ঈদের সময় কোন ধরনের রোগী বেশি এসেছে জানতে চাইলে বলেন, কিছু পুলিশ কেস, আর কিছু কোরবানির সময় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কারণে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি রোগী এসেছে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে।

ইমারজেন্সি বিভাগে দায়িত্বরত ডা. সুধীর বলেন, আমরা ডাক্তার আমাদের দায়িত্ব হলো রোগীদের সেবা প্রদান করা। ঈদের ছুটিতে রোগীদের সেবা প্রদান করতে পেরে ভালো লাগছে।

DMC

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডাক্তার বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি রোগীদের যেন ঈদের দিনে একা না লাগে। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের মানসিক অবস্থার দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে। তারপরও কিছু রোগী অসন্তুষ্ট হয়েছে। আমাদের অর্ধেকের বেশি ডাক্তার ও স্টাফ ছুটিতে। অর্ধেক জনবল নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এতে ওয়ার্ডে রোগী দেখতে যেতে একটু দেরি হলেই রোগীরা চিল্লাচিল্লি শুরু করে। তাদেরও তো একটু বোঝা উচিত।

ঈদের এই মহেন্দ্রক্ষণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে না পারলেও রোগীদের কাছে পরিবার হয়ে উঠেছে ডাক্তারা ও স্টাফরা। তাদের সঙ্গে হাসপাতালের চার দেয়ালের মধ্যেও ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই হয়ে উঠেছে রোগীদের জন্য আনন্দের উৎস। আর তাতেই হয়তো কিছুটা হলেও ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে তাদের জীবনে।

এমএইচএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর