ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় নেমে এসেছে এক ধরনের নিস্তব্ধতা। ঈদের তৃতীয় দিনেও রাজধানীর বেশির ভাগ মার্কেট, দোকানপাট বন্ধ। ফুটপাতের অল্প কিছু দোকান খোলা থাকলেও নেই তেমন বেচাকেনা।
সোমবার (৯ জুন) রাজধানীর গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় সব বড় বড় বিপণিবিতান, মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলো বন্ধ দেখা গেছে। যদিও কোথাও কোথাও কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকান খুলে রেখেছেন, তবুও বেচাকেনা নেই বললেই চলে।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, মৌচাক, মালিবাগ, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ ঢাকার প্রধান প্রধান মার্কেটগুলো ঈদের আগে হাজারো ক্রেতার পদচারণায় মুখর থাকলেও বর্তমানে একেবারেই ফাঁকা। দোকান মালিক ও বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে বিক্রির ধুম থাকলেও ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পরপরই রাজধানী ফাঁকা হয়ে যায়। অধিকাংশ মানুষ ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে চলে যাওয়ায় শহরে ক্রেতার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া মার্কেটের স্টাফ ও দোকান কর্মচারীদের বেশিরভাগই ঈদে ছুটিতে চলে যায়। ফলে মালিকরা চাইলেও দোকান খুলতে পারেন না।
সাধারণত ঈদের ছুটিতে অধিকাংশ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে যায়। শহরে যারা থাকেন, তারাও উৎসবের দিনগুলোতে বাজারমুখী হন না। ফলে বেচাকেনা একপ্রকার বন্ধ থাকে।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন শপিংমল ও রাস্তার দোকানেও দেখা গেছে একই চিত্র। কিছু দোকানপাট সম্পূর্ণ বন্ধ, আর যেগুলো খোলা— তাদের চোখেমুখে হতাশা।
এক চায়ের দোকানদার বলেন, ঈদের দিনগুলো শহরে নীরবতা থাকে। শুধু দোকান খুইলা রাখছি, বিক্রি তো নাই। মানুষ গ্রামে চলে গেছে।
বিক্রেতারা আশাবাদী, ছুটি শেষে মানুষ শহরে ফিরলেই আবার বাজারে প্রাণ ফিরে আসবে। একাধিক ফুটপাত বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকান খুললেও তাদের বিক্রির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এক বিক্রেতা জানান, সকালে দোকান খুলেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিক্রি হয়নি। ঢাকায় মানুষই নেই, বিক্রি হবেই বা কীভাবে?
যাত্রাবাড়ীর নিউ অপটিক্যাল হাউজের স্বত্বাধিকারী রামিম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, দোকান খুলে আছি। কিন্তু বিকিকিনি নেই একদম। গতকাল দুই-এক পিস বিক্রি হলেও আজ এখনও শুরু করতে পারিনি।
এই সময়টাতে সাধারণত কম আয়ের মানুষেরা ঈদের পর কিছু কেনাকাটা করতে বের হন, তবে এবার দেখা যাচ্ছে সেটাও হচ্ছে না। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র। ব্যস্ত সড়কগুলোতেও যানবাহনের চাপ কম, রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের পরের এই নিস্তব্ধতা ঢাকার এক প্রকার বার্ষিক চিত্র। তবে এ বছর মানুষ গ্রামে কিছুটা বেশি আগেই চলে গেছেন এবং শহরে ফেরার হারও ধীরগতিতে হচ্ছে, তাই পুরো পরিবেশ আরও স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
তবে দোকানিরা আশাবাদী যে, ছুটি শেষে যখন মানুষ কর্মস্থলে ফিরবে, তখন বিপণীকেন্দ্রগুলোতে আবারও চাঞ্চল্য ফিরে আসবে। অনেকেই অপেক্ষায় আছেন ঈদের পরে ছাড়ের মৌসুম শুরু হবে, যেখানে বিক্রেতারা অবিক্রিত পণ্য কম দামে বিক্রি করেন।
এমআর/এফএ