ঈদের লম্বা ছুটিতে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের মতো জিয়া উদ্যানও মুখর হয়ে উঠেছে মানুষের পদচারণায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা নগরবাসীর পদচারণায় উদ্যানজুড়ে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
রোববার (৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর জিয়া উদ্যানে বেড়াতে আসা নগরবাসীর এমন আনন্দ চোখে পড়ে। দেখা যায়, বিজয় সরণি থেকে শুরু করে জিয়া উদ্যানের প্রবেশ গেট পর্যন্ত অনেক মানুষের আনাগোনা। কেউ হেটে জিয়া উদ্যানের ভিতরে যাচ্ছেন কেউবা লেকের পাড়ে বসে আপন মনে পরিবারের সঙ্গে বসে বাদাম খাচ্ছেন আবার কেউ ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। আবার দেখা যায় কেউ উদ্যানের ভিতরে গাছের ছায়ায় বসে পরিজনদের সঙ্গে চটপটি-ফুচকা ভাগ করে খাচ্ছেন। এ যেন অন্যরকম এক জিয়া উদ্যান। সবুজের মায়ায় ঘেরা এই উদ্যান নগরবাসীর জন্য নতুন করে জেগে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
জিয়া উদ্যানে ঘুরতে আসা সোহান বলেন, আমি ও আমার বাবা এসেছি ঘুরতে। আমি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। এখনও বিয়ে করিনি। বাবা ও মার বয়স হয়েছে, চাকরির কারণে তাদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারি না। এছাড়া তাদের বয়সের কথা চিন্তা করে দূরে যাওয়া হয় না। সেজন্য বাড়ি কাছে তাদের ঘুরতে নিয়ে এসেছি। তারা খুব খুশি হয়েছে। তাদের খুশিতে এখন আমারও খুশি।
চার সন্তান নিয়ে দম্পতি রায়হান ও শাম্মি এসেছেন সবুজে ঘেরা এই পার্কে। সন্তানেরা পার্কে যাওয়ার জিদ করছিল; তাই তারা জিয়া উদ্যানকে বেছে নিয়েছে। রায়হান বলেন, দুপুরে পরপরই এখানে এসেছি। এতক্ষণ ঘুরলাম শহীদ জিয়ার কবর দেখালাম। সন্তানদের নিয়ে চটপটি খেলাম। এখন বসে বিশ্রাম নিচ্ছি। রোদ কমলে কোনো একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাসায় যাব।
কিছু শিশু-কিশোর ঘুরতে এসে লেকে নেমে গোসল করে আনন্দ করছে। উদ্যানের লেকে শিশু ও কিশোরদের গোসল করা দেখে মনে হচ্ছে ঈদ যেন তাদেরই। তারা এসেছিল ঘুরতে, তবে ঘোরা শেষ করে পরম তৃপ্তি নিয়ে জিয়া উদ্যানের লেকে গোসল করছে; লাফ দিচ্ছে উদ্যানের ব্রিজের উপর থেকে।
বিজ্ঞাপন
উদ্যানের লেকঘেঁষা এলাকাটি হয়ে উঠেছে আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে দেখা গেছে, গরমের তাপপ্রবাহের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে শিশু-কিশোররা নেমে পড়েছে লেকের পানিতে গোসল করতে। একদল শিশু পানিতে সাঁতার কাটছে, কেউবা শুধু হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে পানি— চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের হাসির রোল।
কিশোর জুনায়েদ ও তার বন্ধুরা জিয়া উদ্যানে ঘুরতে এসেছিল। জুনায়েদ জানায়, সকাল থেকে আমরা কয়েকজন বন্ধু ঘুরছি। সবশেষে এখানে এসেছি। উদ্যানের ভিতর ঘুরে বাড়ি ফেরার পথে এক বন্ধু বলল, চল গোসল করি। এরপরই আমরা সবাই গোসলে নেমে পড়েছি। পানি ঠান্ডা থাকায় উঠতে মন চাইছে না। আর কিছুক্ষণ গোসল করে তারপর বাড়ি যাব।
অন্যদিকে লেকের কিনারায় বসে পা ভিজিয়ে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে। এক মা তার ছোট কন্যাকে হাঁটুপানিতে দাঁড় করিয়ে হাত ধরে রেখেছেন। মেয়ের মুখে খুশির ঝিলিক দেখে যেন তিনিও নিজেই পানিতে নেমে আনন্দ করছেন এমন অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে তার চোখেমুখে। শুধু শিশুরাই নয়, প্রেমিক-প্রেমিকাও বাদ যাননি এ আনন্দে। লেকের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন, কেউ সেলফিতে বন্দি করছেন ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্ত।
নগরের ব্যস্ততা আর কোলাহল ভুলে ঈদের এই ছুটিতে কিছুটা প্রশান্তি আর নির্মল আনন্দ পেতে মানুষ ছুটে এসেছে জিয়া উদ্যানে। এতে করে গোটা এলাকা যেন রূপ নিয়েছে একটি প্রাণবন্ত আনন্দমেলায়।
নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা। বিকেল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়তে থাকে ভিড়। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে সঙ্গে নানা বয়সী মানুষের আনন্দঘন উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে জিয়া উদ্যানের প্রতিটি কোণ।
এমএইচএইচ/এফএ