চার দিনেও জমে ওঠেনি রাজধানীর বসিলা পশুর হাট। পাবনা থেকে ২৫টি গরু নিয়ে হাটে আসা সাঁথিয়া উপজেলার নজরুল ইসলাম এখনো বিক্রি করতে পারেননি একটিও। তার সঙ্গে আছেন আরও সাতজন। সবাই মিলে এনেছেন ১৪০টি গরু। বেচাবিক্রি নেই তাদেরও। ফলে হতাশ এসব বেপারীরা।
এই হতাশার মাঝেই বিশেষ ভাবে নজর কাড়ছে মেহেরপুরের গাংনী থেকে আসা ‘বাদশাহ’। ওজন তার ১২ থেকে ১৩ মন। দাম হাঁকা হচ্ছে সাড়ে সাত লাখ।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩ জুন) বসিলার চল্লিশ ফিট হাট সরেজমিনে ঘুরে এবং বেপারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেচাবিক্রি নিয়ে নজরুল নামে এক বেপারী জানালেন, এখনো হাটের মতিগতি তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। ক্রেতারা এলেও দামদর করে চলে যাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন কিনা।
এ অবস্থা শুধু নজরুলের নয়, বসিলা হাটের অধিকাংশ বেপারীর। তবে এর মাঝেও টুকটাক বেচাবিক্রি চলছে।
বিজ্ঞাপন
নজরুলের সঙ্গে আসা বেপারীরা কী জানান, গত বছর তারা এই সময়ে অর্ধেক গরু বিক্রি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এবছর তেমন কোনো আলামত নেই। হাটে ক্রেতা অনেক কম। তবে তারা আশাবাদী বুধবার (৪ জুন) থেকে হাট জমতে পারে।
নিয়ামতপুর থেকে আসা বেপারী সরোয়ার জানালেন, তিনি সাতটি গরু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখনো কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি। তার সঙ্গে এসেছেন আরও চারজন। তারাও একই কথা জানালেন।
এসময় কথা হয় মোহাম্মদপুর থেকে গরু কিনতে আসা ক্রেতা জহিরের সঙ্গে৷ তিনি তখনো গরু কেনার জন্য খুঁজছিলেন। কিন্তু মনের মতো গরু খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি জানালেন, এবার গরুর দাম তার কাছে বেশি মনে হচ্ছে।
এসময় কথার ফাঁকে তার সামনে দিয়ে একটি গরু নিয়ে যাচ্ছিলো কয়েকজন যুবক। কত টাকায় নিলেন তাদের প্রতি জোরে ডাক দিয়ে দর জানতে চাইলেন জহির। তাদের একজন বলে উঠলেন, ৭৫ হাজার টাকা!
এরপর তিনি বলেন, ভাই এবার প্রমাণ পেলেন তো গরুর দাম বেশি! তার মতে, গতবার ছোট সাইজের গরু সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার সেই গরু বেপারীরা চাচ্ছেন ৮০-৯০ হাজার টাকা। যা অস্বাভাবিক দাম বলছেন তিনি।
এ হাটে গরু বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের বারের মতো নয় বলে ধানমন্ডি থেকে আসা গরু ক্রেতা সালাম নিয়ন। তিনি বলেন, গতবার গরু কিনতে এসেছিলাম তখন বেশ ভিড় ছিল। এবার ভিড় কম মনে হচ্ছে। হয়তো আগামীকাল হাট কমবে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারাও এবার গরুর দাম শুনে বেশ হতাশ। অস্বাভাবিক দাম চাচ্ছেন ক্রেতারা। ফলে তারাও কাঙ্ক্ষিত দাম হাঁকিয়ে পছন্দের গরু পাচ্ছেন না।
এদিকে হাট ইজারাদারের লোকজন মাইকে নানা কথা বলে বেপারীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। কোনো একটি গরু বিক্রি হলেই তারা ঘোষণা দিয়ে জানান দিচ্ছেন।
এসবের মাঝেই মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে হাটে নেমেছে বাদশাহ। হাট ঘুরে গরুটির মালিকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
গরুর মালিক আজমাইন জানালেন, গরুটির বয়স চার বছর, ছয় দাত। মাংস হবে প্রায় ১২ থেকে ১৩ মন। তবে তিনি সাড়ে সাত লাখ টাকা দাম চাইলেও ৭ লাখ হলে দিয়ে দেবেন।
তার দাবি, গরুটি দেশি জাতের। কোনো ভেজাল নেই। তিনি হাটে নিয়ে এসেছেন ২১টি গরু। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তিনটি। তবে তার সব গরু, এমনকি হাটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ‘বাদশাহ’, যাকে দেখতে অনেকেই ভিড় করছে।
অন্যদিকে একই হাটে আরেকটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু উঠেছে যার দাম হাঁকানো হচ্ছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। নাম বড়বাবু।
গরুটির মালিক পিকলুস জানালেন, এটি ফ্রিজিয়ান জাতের। ছয় দাঁত এবং চার বছর বয়স। তিনি বাড়িতে লালনপালন করেছেন। তার দাবি, গরুটির মাংস হবে প্রায় ৮ মন। তবে তিনি লাইভ ওজন দেননি সব মিলে কত।
বড় বাবুকেও দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় বেশ লক্ষ্যণীয়। হাটে আগতরা গরুর দাম জিজ্ঞেস করছেন, জানতে চাচ্ছেন কী খাওয়ানো হয়। গরুর মালিক এবং তার কর্মচারীরা বেশ ক্লান্ত এসব প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে। তবু তারা আগ্রহ নিয়েই কথা বলছেন।
গরুটির মালিক পিকলুস বলেন, গত চার বছর থেকে পালন করছি। বিদেশি জাতের গরু হলেও আমার গোয়াল ঘরে পালন করা। কোনো প্রকার ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। ঘাস লতাপাতা ভুসি খাইয়ে তাকে বড় করা হয়েছে।
বড়বাবুর দাম সাড়ে সাত লাখ টাকা চাচ্ছেন বেপারী পিকলুস। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্রেতারা তেমন দাম বলেননি। তারা আসছেন, দেখছেন কিন্তু দাম বলছেন না কেউ।
পিকলুস আরও জানান, এই গরুটি চেয়ে আরও একটি বড় গরু তার বাড়িতে রাখা আছে। আগামী বছর সেটি হাটে তুলবেন।
গরুটি আনা হয়েছে ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলা থেকে। সোমবার হাটে নামিয়েছেন মালিক। তবে এখন পর্যন্ত ক্রেতা পাননি। তার প্রত্যাশা গরুটি ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হবে।
এমআইকে/এএইচ