ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছে কর্মজীবী মানুষ। দীর্ঘ ছুটির কারণে এবারের ঈদযাত্রা তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক। সড়ক ও রেলপথে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলেও, লঞ্চে যাত্রী কম। বিশেষ করে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদের ব্যস্ততা এখনও দেখা যায়নি। আগাম টিকিট বিক্রিতেও তেমন সাড়া মেলেনি, এবং অনেক কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়নি।
গতকাল (২ জুন) ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছিল যাত্রীদের পদচারণায় পূর্ণ। ট্রেনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়নি এবং যাত্রীরা সন্তুষ্ট ছিলেন সময়মতো ট্রেন ছাড়ায়। এছাড়া, টিকিটবিহীন যাত্রীদের প্রবেশ ঠেকাতে স্টেশনে বেশ কয়েক দফা চেকিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য উপকারি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় যাতে যাত্রীরা কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়েন, সেই জন্য স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও চেকিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিনা টিকিটের যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপক চেকিং চলছে। হকার এবং ভবঘুরেদেরও স্টেশন এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতেও যাত্রীদের চাপ কম ছিল। সাধারণত ঈদের সময়ে বাস টার্মিনালগুলোতে দীর্ঘ সারি দেখা যায়, তবে এবার সেক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীদের কেউ অতিরিক্ত ভাড়া বা ভোগান্তিতে পড়েননি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন— ঈদের দু’দিন আগে যাত্রী চাপ কিছুটা বাড়তে পারে, তবে এখন পর্যন্ত যাত্রীরা স্বস্তিতে রয়েছেন।
এবার ঈদের সময়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। যদিও সড়কপথে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু নৌপথে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে, আগাম টিকিট বিক্রিতেও তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অনেক কেবিনের টিকিটও বিক্রি হয়নি। লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কপথে যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গেছে, তাই লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমেছে।
লঞ্চ মালিকরা জানান, সাধারণত ঈদের আগে এই সময়ে লঞ্চে কেবিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ত, কিন্তু এবার অনেক কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়নি। বিশেষ করে, বরিশাল রুটে যাত্রী কম। লঞ্চ মালিকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অবহাওয়ার খারাপ পরিস্থিতির কারণে অনেকে গ্রামে যেতে চাইছেন না, ফলে লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমেছে।
বিজ্ঞাপন
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হবে, যা চলবে ১০ জুন পর্যন্ত। তবে, যাত্রী না থাকায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, চলতি বছর সড়কপথের সুবিধা নেওয়া মানুষ অনেক বেশি, আর নৌপথে আগের মতো ভিড় নেই।
লঞ্চ মালিক মোহাম্মদ হাবিব বলেন, ‘ঈদের আগের দু’দিন যাত্রীর চাপ সাধারণত বেশি থাকে, তবে এবার তা খুবই কম। লঞ্চের কেবিনে এখন মানুষ আসছে না।’
পদ্মা সেতুর চালু হওয়ার পর সড়কপথে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে, আর নৌপথের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেক লঞ্চ মালিক এখন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছেন। তাদের মতে—আগের বছর ঈদের সময়ে কেবিন পাওয়া যেত না, কিন্তু এবার লোকজন আসছেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে যাত্রীরা নৌপথে আসতে চাইছেন না।
এইউ