বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রায় ১০ দিন ধরে আন্দোলন করছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ট্যাগিং বন্ধ করে আন্দোলনরত কর্মীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন জুলাই ঐক্য।
শনিবার (৩১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিতে বক্তব্যে জুলাই ঐক্যের নেতৃবৃন্দ বলেন, চব্বিশের ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছে দাঁড়িয়েছে সংস্কার কার্যক্রম। আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকার সংস্কারের চেষ্টা করলেও নানা কারণে অনেকেই এই সংস্কার গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। আমরা দেখছি সচিবালয়ে কীভাবে কাজ বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে একটি বিশেষ মহল। আমরা গত ২০ মে ৪৪ আমলার তালিকা প্রকাশ করেছিলাম। বলেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কিন্তু এখনও দৃশ্যমান কিছু দেখছি না। গত কয়েকদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৬-৭ হাজার লোক মানবেতর জীবনযাপন করছে সংস্কারসহ নানা দাবিতে। গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে আমরা জানতে পারি শেখ হাসিনা সরকারে সময় থেকেই তারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে ছিল। শেখ হাসিনা সরকার সে সময় আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে অনেককে বরখাস্ত করে। শুধু সেখানেই শেখ হাসিনা থেমে যায়নি তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর তারা একই দাবিতে মাঠে নামলে দেখা যায় সেই একই চিত্র ফুটে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের এবার ফ্যাসিবাদের দোসর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তারা বলেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি- গ্রামাঞ্চলসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের ৪ কোটি ৮২ লাখ গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ীকরণসহ সাত দাবিতে গত ১০ দিনের বেশি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি সারাদেশেও সমিতিগুলোতে কর্মবিরতি পালন করছে তারা। এতে শহর থেকে গ্রামে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহকরা। ভোগান্তি বাড়ার পাশাপাশি রাজধানীর বাইরে যেসব শিল্প রয়েছে সেগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত কয়েক দিনের আন্দোলনে আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ অধিকাংশ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো শহীদ মিনারে এসে সংহতি জানিয়েছে। তাদের দাবিগুলো অযৌক্তিক হলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পাশে কেন দাঁড়াল তার কোনো জবাবও সরকারের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি। চলমান এই সংকটের মধ্যে জুলাই ঐক্য থেকে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে সরকার এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার। কিন্তু আমরা বারবার চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সাক্ষাৎ পাইনি।
‘আমরা জানতে পেরেছি কোনো একটি গ্রুপ সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি জমা দেন তারপর থেকেই সরকারের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আমরা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনারা নিজেরা বসে এটি সমাধান করুন। যদি এখানে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয় তাহলে সংস্কার করুন।’
বক্তারা বলেন, বৈষম্যহীন যে বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের হাজারো ছাত্র-শ্রমিক-জনতা বুলেটের সামনে নিজের বুক পেতে দিয়ে যে স্বৈরাচার মুক্ত ২য় স্বাধীনতার এই বাংলাদেশ এনেছে সেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মধ্যে দ্বৈত ব্যবস্থাপনা, চরম পর্যায়ের বৈষম্যমূলক আচরণ এর কারণে সমিতির যে কর্মীগণ আন্দোলন করেছেন সেখানে কিছু দাবি যৌক্তিক রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেন, সরকারের উচিত ছিল আরও আগেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে উক্ত সমস্যার সমাধান করা। সরকার সে ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে আমরা মনে করছি। ঝড় বৃষ্টিতে যারা ১০ দিন রাস্তায় পড়ে আছে তাদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। ঈদুল আজহার বাকি আছে ৬ দিন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সমাধান না হলে জুলাইয়ের যে আশা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যেহেতু পুরো বিষয়গুলো রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অবগত তাই সম্ভব হলে সকলের সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে দ্রুত এটির ফয়সালা করার অনুরোধ করছি।
টিএই/এএস

