বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে আজ ১৬ জ্যৈষ্ঠ। ঋতু বৈচিত্র্য অনুযায়ী এ মাসে সাধারণত প্রচন্ড তাপদাহে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। পাকা ফলের ঘ্রাণ মাতিয়ে তোলে প্রাণ-প্রকৃতিকে। এই মাসকে মধু মাসও বলা হয়ে থাকে। এবার সেই মধু মাসে পাকা ফলের মন মাতানো ঘ্রাণের সঙ্গে বৃষ্টির ছোঁয়ায় যৌবন উদ্দীপ্ত প্রকৃতিরও দেখা মিলছে। কখনও মুষলধারে আবার কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে। যা জনজীবনে দুর্ভোগ আনলেও প্রাণ-প্রকৃতিতে স্বস্তির বার্তাও দিচ্ছে। সৌন্দর্য পিপাসুদের মনকে করেছে উতলা।
এবার জ্যৈষ্ঠে প্রাণ-প্রকৃতিতে যে সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে, তাতে রয়েছে আষাঢ়ের ছোঁয়া। এতে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। রাজধানীর নোংরা মরা খাল-ঝিলেও বেড়েছে পানি। যা প্রাণ-প্রকৃতির জন্য স্বস্তির। আবার প্রকৃতিতে এখন জ্যৈষ্ঠের বর্ণিল ফুলে ছেঁয়েছে পথঘাট। বৃষ্টির স্পর্শ পাওয়া প্রতিটি ফুলের যে হৃদয়গ্রাহী সৌন্দর্যের তান তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। ঝরা ফুলের গালিচার সঙ্গে বৃষ্টির অন্তরঙ্গ প্রেম পথচারী কিংবা দর্শনার্থী সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছে প্রতিটি মুর্হূতে।
রাজধানীজুড়ে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটায় ধুয়ে যাচ্ছে ধুলোর স্তর, পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে নগরীর বাতাস। শীতল বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কদম, বেলি, জুঁইয়ের ঘ্রাণ। বৃষ্টিতে অনেকেই বৃষ্টিবিলাসও করছেন। দুর্ভোগ থাকলেও মুখে হাসি। প্রিয়জনের হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে ওঠা। অনেককেই দেখা যাচ্ছে নগরের পিচঢালা সড়কে, জিয়া উদ্যানে কিংবা রমনার মতো নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্পটগুলোতে।
বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে কারওয়ান বাজার এলাকায় তিন বন্ধু মিলে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খুনসুটি করতে করতে পিচঢালা পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন সোহাগ আলী।
তিনি বলেন, বৃষ্টিতে দুর্ভোগ হয়েছে। গাড়ি পাইনি। তবে সেই সুবাদে তিন বন্ধু মিলে ভিজে ভিজে বাড়ি ফেরার সুযোগ হয়েছে। অনেক দিন বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ হয়নি। মোবাইল আর মানিব্যাগ পলিথিনে মুড়িয়ে নিয়েছি। আজ রাস্তায় তিন বন্ধু মিলে যে আনন্দ করছি, তা আগে কখনও হয়েছে বলে মনে পড়ছে না।

বিজ্ঞাপন
গত বেশকিছু দিন থেকেই রাজধানীর আকাশ কখনও মেঘলা, কখনও রোদ্দুর আবার কখনও কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই নেমেছে বৃষ্টি। আচমকা বজ্রপাতের বিকট শব্দ চমকিয়েও দিয়েছে। এমন সৌন্দর্য সৌন্দর্য পিপাসুরা ঠিকই উপভোগ করেছেন। প্রকৃতির আলিঙ্গন পেয়ে মুহুূর্তটাকে করে তুলেছেন বিশেষ। সেখানে হয়তো কারও কারও প্রিয়জনের শূন্যতা ছিল সত্য, তবে প্রকৃতির ভালোবাসা উপভোগ্য করে তুলতে প্রচেষ্টার কমতি ছিল না।
পারভেজ রনি নামের এক যুবক ঢাকা মেইলকে বলেন, বৃষ্টি আসলে গ্রামের সেই শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে যাই। কিন্তু সেই শৈশবের মতো তো জীবনকে রাঙাতে পারি না। তবে বৃষ্টি হলে চেষ্টা করি, একটু উদযাপনের। বিশেষত যখন অফিস ছুটি থাকে, সেই দিনগুলোতে বৃষ্টি হলে অবশ্যই ভেজা হয়। আর এবার ঢাকার প্রকৃতিতে একটু বাড়তি সৌন্দর্যের ছোঁয়া লেগেছে মনে হচ্ছে। এতো এতো ফুল ও সবুজ প্রকৃতিতে যে কারও মন উতলা হবেই।

শুধু মানুষই নয়, প্রাণ ফিরে পেয়েছে রাজধানীর গাছপালা, ফুল আর পাখিরাও। ধুলোময় পাতাগুলো যেন নতুন রূপে রাঙিয়ে উঠেছে। বৃষ্টি বিলাসে মেতেছে পাখিরাও। বৃষ্টি শেষে পাখিদের গুঞ্জন অন্যরকম আবহ তৈরি করছে। যে আবহে কারও পুরোনো স্মৃতি ভেসে ওঠে কারও বা তৈরি হচ্ছে মধুর মুর্হূত।
এমআই/এফএ

