সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অল্প বৃষ্টিতেই নিউমার্কেট এলাকায় হাঁটুপানি, মশার আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

সাখাওয়াত হোসাইন
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

new market
বৃষ্টিতে নিউমার্কেট এলাকায় জলাবদ্ধতা। ছবি: ঢাকা মেইল

অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটুজল, টানা বৃষ্টিতে কী হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার কথা বলছি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে কয়েকদিন ধরে সারাদেশে টানা বৃষ্টি, বাদ যায়নি রাজধানী ঢাকাও। আর এতেই যেন নৌকা ভাসানোর মতো পানিতে ডুবেছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা। এতে পথচারী ও বিভিন্ন গন্তব্যমুখীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

শুক্রবার (৩০ মে) সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।


বিজ্ঞাপন


সকাল সাড়ে দশটার দিকে দেখা যায়, নিউজমার্কেটের গ্লোব মার্কেট থেকে গাউসিয়া মার্কেট পর্যন্ত হাটু পরিমাণ পানি রয়েছে। হাঁটতে পারছেন না পথচারীরা। কেউ কেউ আবার কাপড় উঠিয়ে বাধ্য হয়ে হাঁটু পানিতেই চলাচল করছেন। 
পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বন্ধ রয়েছে দোকান-পাট। সড়কের গণপরিবহন আর প্রাইভেটকারের পানির ঢেউতে রিকশা চালকদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি কম থাকায় পানি নামতে শুরু করেছে।

তবে নিউমার্কেটের বিভিন্ন অলিগলিতে দুপুর পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। এতে তীব্র কষ্ট হচ্ছে পথচারীদের। আর বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা। নুরহাজানমার্কেটের নিচতলার বিভিন্ন দোকানে জমেছে পানি।

এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা জানান, অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যায় নিউমার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক। এতে নেমে আসে ভোগান্তি। ব্যবসায়ীদের কমে যায় ক্রেতার সংখ্যা, বন্ধ হয়ে যায় ফুটপাতের দোকান। অপেক্ষায় থাকতে হয় বৃষ্টির পানি কমার জন্য। এসব সমস্যার সমাধান চান সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীদের কষ্ট


বিজ্ঞাপন


জানতে চাইলে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই সব সময় নিউমার্কেট এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। প্রতি বছর বর্ষাকালে এই সমস্যাটা হয়। এতে বাণিজ্যেও সমস্যা তৈরি হয়, কমে যায় ক্রেতা সংখ্যা। অথচ সিটি করপোরেশন চাইলেই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এমনকি ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নতি করে না।

1000219431

আরেক ব্যবসায়ী আফসারুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে পানি ব্লক হয়ে আছে। সেজন্য পানি নিষ্কাশন হওয়ার জায়গা পায়নি। ফলে মার্কেটে পানি ঢুকেছে। আর একটুতেই নিউমার্কেট এলাকায় পানি জমে যায়- এজন্য আশু ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যেন পানি অল্পতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমতে না পারে।

এদিকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ধানমন্ডি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) সংলগ্ন আবাসিক এলাকাবাসী ও ঢাকা কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ময়লা পানিতে পুরো সড়ক ডুবে থাকার কারণে হেঁটে কেউ নিজের বাসায় এবং যেতে পারছেন না। ব্যবহার করতে হচ্ছে বিকল্প উপায়।

নিউমার্কেটের নায়েমের গলির ভেতর থেকে আসা শরীফুল হক নামের এক পথচারী ঢাকা মেইলকে বলেন, নায়েমের গলির ভেতরের সড়কে এখনও হাঁটু পরিমাণের বেশি পানি রয়েছে। চলাচল করা খুবই কষ্ট। রিকশার সংখ্যাও খুবই কম, যা রয়েছে হাতেগোনা। এতে নায়েমের গলিতে থাকা বাসিন্দাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।

এদিকে বৃষ্টির দিনে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন রিকশাচালক ও সিএনজি চালকরা। তাঁরা বলছেন, কষ্ট করে হাঁটু পানিতে তারা রিকশা চালাচ্ছেন। এজন্য একটু বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন।
মাহবুব নামে এক রিকশাচালক ঢাকা মেইলকে বলেন, বৃষ্টির সময়ে রিকশা চালাইতে কষ্ট৷ পানি পুরা রিকশার চাকায় থাকে৷ প্যাডেল মারতে কষ্ট হয় অনেক, এজন্য ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হয়।

মশার আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

এদিকে বৃষ্টি পরবর্তী মশার উৎপাতের আতঙ্কে রয়েছেন নিউমার্কেটবাসী। জানা গেছে, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ও আজিমপুর এলাকায় ঢাকা কলেজ ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পচা পানি ও ময়লার কারণের এসব এলাকায় মশা ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন। সেইসঙ্গে মশা প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, অল্প একটু বৃষ্টিতে হলপাড়া ডুবে যায়, হাঁটার মতো অবস্থা থাকে না। হলপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় এখনও পানি জমে আছে। পানির সঙ্গে ময়লা তো আছেই। এতে মশার উৎপাত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা মশার আতঙ্কে রয়েছে। দ্রুতই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, না হয় অন্যান্য বছরের মতো শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির পরবর্তী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়বে মশার উপদ্রব। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভোগান্তিতে পড়বেন আবাসিক শিক্ষাক্ষার্থী। কেননা, শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।

1000219430

জাকিয়া আক্তার নামে ইডেন মহিলা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিবছর আবাসিক শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির পরবর্তী মশার উপদ্রবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এতে শিক্ষার্থীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ বছর যেন সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপগ্রহণ করা হয়।

যা বলছে সিটি করপোরেশন

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, সড়কের ওপরে এই মুহূর্তে যা আছে তা টানা বৃষ্টির ফলাফল। বৃষ্টি কমে গেলে আধা ঘণ্টার মধ্যে এই সমস্যা নিরসন হয়ে যাবে। তবে স্থায়ী যদি কোনো জায়গায় জলাবদ্ধতা হয় সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কুইক টিম সেই লোকেশনে গিয়ে তা নিরসন করবে।

তিনি বলেন, আমরা আসন্ন কোরবানি ঈদকে উপলক্ষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিরসনে চারটি বিশেষ টিম তৈরি করেছি। যেটি জলাবদ্ধতা নিরসনেও কাজ করবে। আর নিউমার্কেটের যে জলাবদ্ধতা তা নিচু জায়গার কারণে হয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের বড় প্রকল্প রয়েছে। এ বছর নানা কারণে তা হয়নি। আগামী বছর বর্ষার আগেই আমরা এ নিয়ে পরিকল্পনা করব।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এসএএইচ/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর