শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শেখ পরিবারের নাম ছেটে ফেলার পর এবার তালিকায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। একটি কলেজ থেকে বাদ পড়ল তার নামও! এ নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি জানিয়েছেন তাজউদ্দীনের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলেজ থেকে বাবা তাজউদ্দীনের নাম বাদ যাওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে তার কিছুই বলার নেই।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নেতাকর্মীদের অপকর্মের জন্যই নিষিদ্ধ হয়েছে ছাত্রলীগ: সোহেল তাজ
কারণ উল্লেখ করে সোহেল তাজ লিখেছেন, ‘আমার বাবা এবং মা এই দেশ এবং এই দেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসতেন, আর তাই এই দেশের জন্য অনেক ত্যাগ করেছেন কিছু পাওয়ার জন্য না। তাই ওনাদের কর্মের স্বীকৃতি এই দেশ কোনোদিন যদি নাও দেয়- ইটস ওকে। বাংলাদেশ ভালো থাকলেই হলো।’
এর আগে বুধবার (২৮ মে) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শেখ পরিবারের ৬৬টিসহ মোট ৬৮টি কলেজের নাম পরিবর্তনের কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার মধ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় অবস্থিত একটি কলেজের নাম ছিল সোহেল তাজের বাবা তাজউদ্দীন আহমদের নামে।
ওই কলেজটির নাম আগে ছিল ‘সরকারি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজ’। পরিবর্তন করে সেটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাপাসিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ’।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: আপাতত আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ দেখছেন না সোহেল তাজ
এ ব্যাপারে নিজের পোস্টে কলেজটির একজন সাবেক শিক্ষার্থীর অনুভূতি সংযুক্ত করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। সেই লেখাটি এমন-
‘মুছে যাক আমার নাম, তবু বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ’- তাজউদ্দীন আহমদ শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ আমাদের কাপাসিয়ার গর্ব ও অহংকারের নাম! বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবের পরিবার এবং বিগ্রেডিয়ার হান্নান শাহ্ সাহেবের পরিবার, এটা আমাদের কাপাসিয়ার ঐতিহ্য। আজ ৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে তালিকার ৩৬ নম্বর কলেজের নামটি ‘সরকারি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজ’। এই নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম ঠিক করা হয়েছে, ‘কাপাসিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ’।
বোঝার সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি, কলেজটি অবস্থিত গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের গ্রামের বাড়ি দরদরিয়া থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে হাইলজোর গ্রামে!’
আরও পড়ুন: নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরতে চাই না: সোহেল তাজ
‘কলেজটি যখন সরকারিকরণ করা হয়, তারও অনেক আগে থেকেই সকলের এই কলেজের নামকরণ করা হয় ‘শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজ’ এবং এই নামেই কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়, যার আগে নাম ছিল ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজ হাইলজোর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার ৯ মাসের মাথায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছে বর্তমান সরকার। যার ফলে আমরা এখন নতুন নাম পেয়েছি ‘কাপাসিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ’।
‘আপনাদের সুবিধার্থে আরও একটি তথ্য জানিয়ে রাখি, কাপাসিয়া সদরে কিন্তু আরও একটি ডিগ্রি কলেজ আছে। তার নামও ‘কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ’ (সরকারি হয় নাই এখনো)। কথা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের নাম বাদ দিয়ে নতুন নামের কারণে কী কী সুবিধা আমরা পাবো! স্বাধীনতা যুদ্ধের এই মহানায়কের নাম বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যই বা কী? কর্তৃপক্ষ কি এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারবে?’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া স্মারকলিপিতে যেসব দাবি জানালেন সোহেল তাজ
‘আসলে নাম পরিবর্তনেই বা কী আসে যায়, যেখানে আমাদের নেতা তাজউদ্দীন আহমদ বলে গিয়েছেন, ‘মুছে যাক আমার নাম, তবু বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ’। আর এইটা তো একটা কলেজ মাত্র। তবে দুঃখ লাগে! তাও লাগতো না, যদি না কলেজটি অন্য কোনো জায়গায় হতো৷ কলেজটি যে তাজউদ্দীন আহমদের নিজ ইউনিয়নে।’
‘সারাদেশে যখন শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা হচ্ছিল, তখন তাজউদ্দীন আহমদ চত্বরে ওনার ম্যুরালে মালা পরিয়েছিল ছাত্র-জনতা! বিগত ৫৪ বছরের নাম নিয়ে কোনো অপরাজনীতির ইতিহাস নেই কাপাসিয়ায়। কেবল চোখে পড়ছে! এরা কারা, কী স্বার্থ তাদের?’
‘আমি এতো কিছু জানি না, এতো কিছু বুঝি না। তবে আমি এই কলেজের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এমআই/এএইচ

