প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত জীবনে প্লাস্টিক ও পলিথিন পরিহার এবং সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাজারগুলোকে পলিথিন ব্যাগমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার (২৮ মে) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এবং রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের যৌথ আয়োজনে ‘রাউন্ডটেবিল অন প্রোটেকটিং ঢাকার রিভার্স অ্যান্ড ক্যানালস ফ্রম প্লাস্টিক ওয়েস্ট থ্রু সার্কুলার ইকোনমি আন্ডার দ্য থিম সেভ ক্যানালস, সেভ সিটি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টা বলেন, ‘পলিথিন ব্যাগ বন্ধের জন্য জিডিপি কমে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন। কিন্তু পরিবেশের জন্য জিডিপি কতটা ধ্বংস হচ্ছে, এর হিসাবও রাখতে হবে। কারণ মানুষের মস্তিষ্কে মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। শপিংমলগুলো পলিথিন ব্যাগমুক্ত হয়েছে, এ নিয়ে কোনো ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় না। এটা প্রকাশ হলে কাঁচাবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা উদ্বুদ্ধ হবে। কিন্তু তারা কাঁচাবাজারে কখন পলিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ হবে, এটা নিয়ে তাদের উৎসুকতা বেশি। যারা পলিথিন উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাত করেন তাদেরকেও এটি বন্ধে সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একটি খাল পুনরুদ্ধারে লাগে ৩০০ কোটি টাকা। সেই টাকায় অনেকগুলো খাল খনন করা সম্ভব। ৫০ থেকে ৭০ কোটি টাকার মধ্যে খালগুলো খনন করা সম্ভব। শুভাঢ্যা খাল পুনরুদ্ধারে ৩০০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আমাকে। খালটি এক নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে আরেক নদীতে মিলেছে। এটি পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখি, এই খাল প্লাস্টিকের খালে পরিণত হয়েছে।’
রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের প্রোগাম অপারেশনস পরিচালক অলোক কুমার মজুমদার বলেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশে ৯ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য জেনারেট হয়। ৭ হাজার ৯০০ মিলিয়ন মাইক্রো ভেস্ট রিলিজ হয়। প্লাস্টিক বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। এটা আমাদের শরীরে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করছে। এই মাইক্রো প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিক রোধে আমরা যদি রিসাইকেল করতে না পারি, তাহলে সমস্যা বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০০৫ সালে যে পরিমাণ এডিপি ব্যবহার হতো, ২০২০ সালে তা পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। এটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমাদের উচিত এটা নিয়ন্ত্রণ করা। তা না পারলে আমাদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে যাবে।’
বিজ্ঞাপন
রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের স্ট্র্যাটেজি পরিচালক জান্নাতুল মুনিয়া বলেন, ‘বিদেশে মানুষ খালের পাড়ে বসবাস করতে আগ্রহী। আমাদের দেশে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। কল্যাণপুর খালের কাছাকাছি আমাদের সহকর্মীরা থাকেন। সেখান থেকেই ধারণা পাই, পাঁচ স্টেকহোল্ডারকে একত্রিত করে কাজ করতে পারলেই প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালে ব্যারিয়ার দিয়ে যদি প্লাস্টিক অপসারণ করতে পারি, সেগুলো খাল, নদী হয়ে সাগরে পড়বে না। খুব কম খরচে এই কাজ করা সম্ভব।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘আমরা যদি সমন্বিতভাবে কাজটা না করি, তাহলে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হবে না। আমরা যদি প্লাস্টিক রিডাকশন না করি, তাহলে যে উৎপাদন হচ্ছে তা থেকে যাচ্ছে। প্লাস্টিক রিডিউস করতে হলে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা তাবাসসুম আব্দুল্লাহ, ইউএনওপিএসের এনভায়রোনমেন্ট প্লিজের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হাসান আহমেদ, ইউএনওপিএস বাংলাদেশের কমিউনিকেশনস ফোকাল মুশফিকা সুলতানা, ঢাকা ওয়াসার ডিএমডি এ কে এম শহীদ উদ্দীন, বিপিজিএমইএ’র সভাপতি শামীম আহমেদ, ইলি স্টারের সাংবাদিক হেলেমুল আলম বিপ্লব, বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এর সম্পাদক ইনাম আহমেদ।
বিইউ/এএইচ
