- সর্বোচ্চ দরদাতা আউট, তৃতীয় দরদাতা পাচ্ছেন পলিটেকনিক্যালের হাট
- সরকার রাজস্ব হারাবে ৭৭ লাখ টাকা
- তেঁজগাওয়েও গাবতলী হাটের সেই চক্র
- অভিযোগের তীর ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের দিকে
- হাট পেতে প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার চিন্তা ভুক্তভোগীর
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার পশুর হাটের ইজারার কার্যক্রম এখনো চলছে। সম্প্রতি গাবতলী হাটের ইজারা সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আইনের ব্যত্যয় ঘটানোর অভিযোগের পর এবার ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খেলার মাঠের ইজারা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা না দিয়ে ৩ নম্বরে থাকা এসএফ করপোরেশনকে হাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এতে কমপক্ষে ৭৭ লাখ টাকার রাজস্ব হারাবে সরকার।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত শনিবার (২৪ মে) ৩ নম্বরে থাকা এসএফ করপোরেশনকে হাট ইজারা দিয়ে কার্যাদেশ জারি করা হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, টেন্ডারে অংশ নেওয়া এসএফ করপোরেশনের দাখিলকৃত ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক গৃহিত ও অনুমোদিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে টাকা জমা দিয়ে চুক্তি সম্পাদন ও কার্যাদেশ নিতে বলা হয়েছে।
অবশ্য টেন্ডারে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান ‘জায়ান এন্টারপ্রাইজ’ ছিল সর্বোচ্চ দরদাতা। সিটি করপোরেশন ইজারাদার হিসেবে এসএফ করপোরেশনকে বেছে নিলেও জায়ান এন্টারপ্রাইজের দর ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭শ টাকা। অর্থাৎ ৭৭ লাখ টাকা বেশি।
এদিকে, ইজারার বাছাই প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে রোববার (২৫ মে) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসককে চিঠি দেন সর্বোচ্চ দরদাতা জায়ান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান মনির।
চিঠিতে জায়ান এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, গত রোববার (১৮ মে) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা নীতিমালা ও পিপিআর-২০০৮ ও সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী এবং দরপত্র দলিলের সব শর্তাবলী অনুসরণ করে চাহিত কাগজ পত্রাদিসহ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খেলার মাঠ এ অস্থায়ী ইজারাতে নেই। হাটটি ইজারা নেওয়ার জন্য ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে জমা দেয়। এতে আমার প্রতিষ্ঠান জায়ান এন্টারপ্রাইজ ২ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭শ টাকা, বি এম এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা, এস এফ করপোরেশন ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, এম এইচ টি পাওয়ার ইঞ্জিয়ারিং ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, আইফাজ এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, পূর্বদেশ এজেন্সি ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, আবু তাহের এন্ড কোং ১ কোটি ১১ লাখ টাকা, চায়না বাংলা ট্রেড লিংক ১ কোটি টাকা, আতিকুর রহমান ৯৩ লাখ টাকা, মেসার্স রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং শেফালী ট্রেডার্স ৭০ লাখ টাকা দর দেয়।
চিঠিতে তিনি আরও বলেছেন, দরপত্র উন্মুক্তকরণ সভায় সবার উপস্থিতিতে এটা জানানো হয়। ইজারা নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর দর অনুযায়ী এবং দরপত্রের শর্তাবলী অনুসারে ইজারা নীতিমালা ও পিপিআর অনুসরণপূর্বক দরপত্রের জামানতের ভিত্তিতে আমিই সর্বোচ্চ দরদাতা। কিন্তু এই বিষয়টি এড়িয়ে নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে এবং কোনোরূপ ত্রুটি বিচ্যুতি না থাকার পরও আমাকে কার্যাদেশ না দিয়ে ৩য় সর্বোচ্চ দরদাতা এস এফ করপোরেশনকে কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি; যা অনৈতিক, বেআইনি ও বৈষম্যমূলক।
গাবতলী হাটের ইজারা সংক্রান্ত অনিয়মের কথা চিঠিতে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে না দিয়ে তৃতীয় দরদাতাকে কোরবানির হাট ইজারা দেওয়া হলে এতে রাষ্ট্রের রাজস্ব ক্ষতি হবে প্রায় ৭৭ লাখ টাকা। যে প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১৯ মার্চ গাবতলী পশুর হাটের বাৎসরিক ইজারা দেওয়ার দরপত্রেও অংশ নেয়। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার পে-অর্ডার ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠান (এস এফ) করপোরেশনকে কালো তালিকাভুক্ত কিংবা আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা। সেখানে সেই প্রতিষ্ঠানকে বিধিবহির্ভূত ভাবে কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এর পেছনে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব কামরুজ্জামান কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, ইজারায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে দেখা গেছে সর্বোচ্চ দরদাতা ইনকাম ট্যাক্সের কাগজ জমা দেননি। তাছাড়া তার ট্রেড লাইসেন্সেরও মেয়াদ নেই। যে কারণে তিনি ইজারা পাননি। এখন না পাওয়ার কারণে হয়তো নানা অভিযোগ তুলছেন।
তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ জায়ান এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান মনির। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘আমার সব ধরণের কাগজ, আপডেট ট্রেড লাইসেন্স জমা দেওয়া। লাইসেন্স আপডেট না থাকলে তো দরপত্র জমা দেওয়ারই সুযোগ নেই।’
জায়ান এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে, ‘সব ধরণের তথ্য আবার দিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়। অন্যথায় ন্যায়বিচার পেতে যা যা করতে হয় করব, প্রয়োজনে আদালতে যাব।’
এসব বিষয় কথা বলতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিইউ/এমএইচটি

