সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিজ কর্মচারীদের হাতেই নির্মমভাবে খুন হন রাইদা পরিবহনের মালিক আনোয়ার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

killing
গ্রেফতার তিনজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় রাইদা পরিবহনের অন্যতম মালিক আনোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর খুনিরা তার লাশ মাটিচাপা দিয়ে গুম করে।

নিহত আনোয়ার হোসেন উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদরে।


বিজ্ঞাপন


ঘটনাটি গত জানুয়ারি মাসে ঘটলেও প্রায় পাঁচ মাসেও কূল-কিনারা হয়নি। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমে আসল রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-আবুল কালাম, শাকিল ও সবুজ। রোববার আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন

স্ত্রীর ‘পরকীয়ার বলি’ কনস্টেবল হুমায়ুন, যেভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন

সোমবার (২৬ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির উত্তরা জোনের ডিসি মুহিদুল ইসলাম।

Raida2
হত্যার কাজে ব্যবহৃত লোহার পাইপ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি আনোয়ার হোসেন সিকদার নিখোঁজ হন। পরদিন তুরাগ থানায় একটি জিডি হয়। তুরাগের মেট্রো গোল চত্বর থেকে ডেসকোর পূর্বপাশে থাকা রাইদা পরিবহনের ডিপোতে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। ঘটনার দিন ১৭ জানুয়ারি সকালে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে ডিপোতে যান। তিনি ডিপোটি পরিচালনা করতেন। বেলা ১১টার দিকে তাকে হত্যার ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

ফের আলোচনায় মোহাম্মদপুরে প্রকাশ্যে হামলা, কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের মহড়া

তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, রাইদা পরিবহনের চালক আসাদুল-সবুজসহ পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করে। গতকাল ২৫ মে আশুলিয়া ও সাভার থেকে আবুল কালাম, শাকিল ও সবুজকে গ্রেফতার করা হয়। এই তিনজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা দোষ স্বীকার করেছেন। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, এই হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী আসাদুল ও সবুজ। আসাদুল প্রধান ভূমিকা পালন করেন।

হত্যার নেপথ্যের কারণ

উত্তরার ডিসি জানান, আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বাস কেনাবেচা নিয়ে বিরোধ চলছিল। কয়েক বছর আগে আনোয়ার একটি বাস ১৮ লাখ টাকায় আসাদুলের কাছে বিক্রি করেন। প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। সেই টাকা পরিশোধ করছিলেন আসাদুল। এখন পর্যন্ত আসাদুল ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি আনোয়ার তাকে বাকি টাকা একসঙ্গে দিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। আর সেই টাকা দিতে না পারলে ১২ লাখ টাকাও ফেরত দেওয়া হবে না বলে জানান।

raida3
হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে পুলিশের ব্রিফিং। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে গ্রেফতার সবুজও আনোয়ারের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। যার সুদ দিতে হতো প্রতি মাসে। সব মিলে সুদে-আসলে ১৪ লাখ হয়েছে। যার সুদ এখনো তিনি পরিশাধ করছিলেন। এই টাকা দেওয়ার জন্য সবুজকে চাপ দিচ্ছিলেন আনোয়ার। এতে সবুজ ও আসাদুল মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

আরও পড়ুন

পারভেজ হত্যা: দুই তরুণী ও আট আসামিকে খুঁজছে পুলিশ

পুলিশ জানায়, সেই মোতাবেক গত ১৭ জানুয়ারি প্রথমে আনোয়ারকে ডিপোতে ডেকে নেওয়া হয়। পরে ডিপোর পেছনে নিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আনোয়ারের গলায় ছুরি চালিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এরপর পাশে থাকা একটি কাশবনে প্রথমে মরদেহ ঢেকে রাখে। পরে একটি কলার বাগানে নিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের তথ্য মতে, পরে এক পর্যায়ে আনোয়ারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শিউলি আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এমআইকে/জেবি   

  

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর