রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে মোটরসাইকেলে ফেরার পথে র্যাব পরিচয়ে ইমদাদ হোসাইন নামে এক সাংবাদিককে গভীর রাতে তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে তার পরিচয়ে পেয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার (২১ মে) দিবাগত রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন সেই সাংবাদিক ও তাকে বহনকারী বাইকার। ভুক্তভোগী সাংবাদিক দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে ইমদাদ এক লাইভে এসে এসব অভিযোগ করেন।
বিজ্ঞাপন
লাইভে এই সাংবাদিক জানান, তার প্রবাসী মামা বিদেশ থেকে আসবেন, এজন্য তিনি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে মামাকে রিসিভ করার জন্য গিয়েছিলেন। পরে যাবতীয় কাজ সেরে সেখান থেকে বাসায় ফিরবেন। ওই সময় একটি পাঠাও ডাকেন। থার্ড টার্মিনালের বিপরীতে কাওলা এলাকায় সেই পাঠাওয়ে ওঠে তিনি বাসার দিকে আসছিলেন। পথে কাওলা সড়কে তাকে বহনকারী চলন্ত মোটরসাইকেলটির সামনে এসে হঠাৎ একটি সাদা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে যায়। এতে সেই মোটরসাইকেলটি আর সামনে এগুতে পারছিল না। এরই মাঝে মাইক্রোবাসে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি নেমে এসে তাকে কোলামোড়া তার ভেতরে তুলে নেয়। এসময় তারা মোটরসাইকেলটির চাবিও ছিনিয়ে নিয়ে মাইক্রোবাসটি নিয়ে ছুটতে থাকে। এরপর কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে মারধর ধরতে থাকে। মাথায় হেলমেট ছিল তার। সেটি খুলে মাথায় কিল-ঘুষি মারা শুরু করে। পরে তারা তার চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তার কাছে থাকা মানিব্যাগসহ যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে নেয়। শেষে তারা তার কাছে জানতে চায় গোল্ড আছে কিনা। এক ব্যক্তির নাম বলে কিন্তু ইমাদাদ তাকে চিনতে না পারেনি। তারা বারবার বলছিল, গোল্ড কই বের কর। এসব বলেই তাদের একজন তার মাথায় পিস্তল ধরে বলে কোন কথা বলবি না। মাইক্রোবাসটির ভেতরে পেছনের দিক থাকা দুজন বলছিল এই ওর জামা চেক কর, পকেট চেক কর। সব জায়গায় চেক কর, ওরে পিডা। বেশিকিছু বললেই গুলি করে দেব। তখন সে বলে আমি তো আমার মামাকে রিসিভ করার জন্য এসেছিলাম, আর আমি পেশায় একজন সাংবাদিক। আমার দেশ পত্রিকায় কর্মরত আছি। এ কথা শোনার পর তারা কিছুটা শান্ত হয়। এরপর তারা ফিসফিস করে কিছু বলে সকলকে সতর্ক করে। পরে তাকে আজমপুরে নামিয়ে দেয় তারা। সেই সাথে তারা তার কাছ থেকে নেওয়া সব কিছু ফেরত দেন। তাকে নামিয়ে দেওয়ার সময় ভুল তথ্যে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে জানায়। কখনো তারা তুমি, আপনি ও তুই বলে সম্বোধন করেছে।
এর পরের ঘটনা তুলে ধরে তিনি জানান, সেখানে নামার পর তিনি একটি সিএনজি ডাকেন। এরপর যেখান থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল সেখানে ছুটে যান। দেখতে পান সেখানেই দাঁড়িয়ে আছেন সেই বাইকার। তার কাছে পৌঁছালে বাইকার জানান, তিনি ভয় পেয়ে দ্রুত বিষয়টি ট্রিপল নাইনকে জানান। কল পেয়ে বিমানবন্দর থানা পুলিশের একজন সদস্য ছুটে আসলে তিনি তার সঙ্গে কথা বলেন।
ইমদাদ হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এ ঘটনার পর নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তবে তিনি এ বিষয়টি রাতেই তার আমার দেশ পত্রিকার সংশ্লিষ্টদের বলে জানান।
বিজ্ঞাপন
মাত্র দশ সেকেন্ডে তুলে নেয় তারা!
ভুক্তভোগী ও সেই বাইকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আট থেকে দশজন ছিল। একটি সাদা হাইস মাইক্রোবাসে এসেছিল। মাত্র দশ সেকেন্ডের মধ্যে ইমদাদকে তুলে নেয় সেই লোকজন। তারা তাকে গোল্ড পাচারকারী হিসেবেই মনে করে তুলে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সাংবাদিক পরিচয় পেলে ভড়কে যায়। এক পর্যায়ে আজমপুর এলাকায় তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ইমদাদকে নিয়ে আসা সেই বাইকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি সেই ভদ্রলোককে নিয়ে কচুক্ষেতের দিকে যাচ্ছিলাম। ঠিক রাত সোয়া একটার দিকে কাওলা থেকে আমরা কেবল রওনা হয়েছিল। কিছুদূর যেতেই দেখি একটি সাদা রঙের হাইস গাড়ি আমার মোটরসাইকেল চাপ দিচ্ছে। ফলে আমি আর সামনে এগুতে পারলাম না। মোটরসাইকেলটা থামতেই সাদা মাইক্রোবাসটি থেকে আট দশজন নেমে আসলো। সেই ভদ্রলোককে কিছু না বলেই তারা তাকে তুলে নিলো এবং আমার চাবিসহ নিয়ে নিলো। তাকে তুলে নেওয়ার সময় তাদের একজন বলছিল, ওরেও তুলে নে। তখন আমি বলছি, ভাই আমার কাছে কিছু নাই। ওনারে আট থেকে দশজন তুলে নিয়েছে মাত্র দশ সেকেন্ডের মধ্যে। তারে তুলে নিয়ে তারা আজমপুরে গিয়েছিল।
বাইকার আরও বলেন, তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরপরিই আমি ট্রিপল নাইনে কল দেই। তারা আমাকে অনেক দেরিতে সাহায্য করেছে কিন্তু অনেক দেরিতে। যা দুঃখজনক। এরপর কল পেয়ে থানা পুলিশ অনেক দেরিতে আসছে। এরইমধ্যে ওই ব্যক্তিও চলে আসছিল। পরে নজরুল নামে একজন পুলিশ সদস্যও আসে। তিনি আমাদের বলছে, এমন ঘটনা প্রায় ঘটে।
সবার গায়ে র্যাবের কটি, গাড়ির নম্বর প্লেট ঢেকে রাখা হয়েছিল
সেই বাইকার জানান, যারা ইমদাদকে তুলে নিয়েছিল তাদের সবার গায়ে র্যাব লেখা কটি পরা ছিল। আর তাদের গাড়িটি ছিল সাদা রঙয়ের হাইস। পুরোপুরি নতুন গাড়ি মনে হয়েছে তার। তবে গাড়ির নম্বর প্লেটটি ঢেকে রাখছিল, যেন বোঝা না যায়। ফলে শেষের দুই জিজিট বুঝতে পারেননি তিনি।
থানা পুলিশ ও র্যাব যা জানাল
এ বিমানবন্দর থানার এসআই নজরুলের সঙ্গে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, একজন সাংবাদিক ও বাইকারে সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছিল। যারা তাকে তুলে নিয়েছিল তারা র্যাব নয়। এমন একটি চক্র আছে। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে রাত থেকে কাজ করছি।
এ বিষয়ে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুনিফ ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এমআইকে/এমএইচটি