সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

স্বাস্থ্যের দুই সচিবকে আ.লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত জুলাই ঐক্যের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫, ১০:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

স্বাস্থ্যের দুই সচিবকে আ.লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত জুলাই ঐক্যের
জুলাই ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুইজন সচিবকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’।

এই দুই সচিব হলেন– মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ৪৪ জন সচিব এবং ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে প্ল্যাটফর্মটি।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (২০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করে জুলাই ঐক্য প্রশাসনের এসব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর দাবি জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে এই তালিকা তুলে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে জুলাই ঐক্য। এ বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেয় সে অনুযায়ী পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান তারা।

জুলাই ঐক্য প্রকাশিত তালিকায় স্বাস্থ্য সচিব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তিনি স্বৈরাচারের দোসর ও সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তা। আওয়ামী আমলে অতিরিক্ত সচিব ও গ্রেড-১ পেয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে থাকাকালীন ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসনে থাকাকালীন ২০১৮ সালের রাতের ভোটের একজন কারিগর ছিলেন। বর্তমান সরকারের সময় তাকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিব ও চুক্তিভিত্তিক সচিব হিসেবেও পদায়ন করা হয়।’

স্বাস্থ্য শিক্ষার সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে, ‘তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সুবিধাভোগী এবং আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অদক্ষতা ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।’


বিজ্ঞাপন


এতে আরও বলা হয়, ‘এমন একজন কর্মকর্তা সচিব হিসেবে পদায়িত থাকলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এবং সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ের গোপনীয়তা লঙ্ঘন হবে। তাকে তার দায়িত্ব বা চাকরি থেকে অপসারণ করা খুবই জরুরি।’

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই আন্দোলনে শহীদ মুনতাছির রহমান আরিফের বাবা গাজিউর রহমান তালিকা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ছেলে ফ্যাসিবাদীর বিলুপ্তি চেয়েছিল। চেয়েছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, দেশ ভালো চলবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে যারা ইন্ধন দিয়েছে তারা এখনো বহাল তবিয়তে। আমরা যে মামলা করেছি তার একজন অপরাধীকেও ধরা হয়নি। না ধরলে বিচার কীভাবে হবে। উল্টো আমাদের হুমকি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা হত্যা করেছে তারাই আবার এ ঘটনার তদন্ত করছে। তাহলে কীভাবে সত্য উদঘাটন হবে? কীভাবেই বিচার হবে? আমরা জানি এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা বহাল রয়েছেন।’
এ সময় জুলাই ঐক্যের নেতা প্লাবন তারিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এসব সচিবরা। আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ দিয়ে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছে। একজন সচিব একসময় সাতক্ষীরার ডিসি ছিলেন, তার নির্দেশে অনেক মানুষের বাড়িঘর ভেঙেছে। তিনি আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক। তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তালিকা প্রকাশ করে আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদে সিস্টেম দাঁড় করাতে সব ক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের দরকার হয়। তাদের তালিকা আমরা প্রকাশ করেছি। আমরা ঝুঁকি নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করছি। জুলাই আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেবো না।’
এ সময় সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি জানায় জুলাই ঐক্য।

এগুলো হলো—আগামী ৩১ মে’র মধ্যে তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে, তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে, দেশের তথ্য পাচারকারী, ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী এবং সহযোগিতাকারী সব আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সবার ব্যাংক হিসাব ও অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে, স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে, আগামী ৩৬শে জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সব স্বৈরাচারের দোসরদের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে এই ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে এবং আগামী ৩১ মে’র মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে তারা এখন কোথায় আছেন এবং কতজন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছেন তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে।

এর আগে গত ৬ মে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে সামনে রেখে ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে জুলাই ঐক্যের আত্মপ্রকাশ হয়। বর্তমান ৮০টি সংগঠন জুলাই ঐক্যের শক্তি।
এসএইচ/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর