সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্নকারী আইন বাতিল চান বিশিষ্টজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৫, ১১:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

B

যেগুলো আমার নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার মত প্রকাশের অধিকার ক্ষুণ্ন করে এমন আইন বাতিল করতে হবে। কিন্তু গত ১০ মাসেও কেন এসব আইনগুলো বাতিল হলো না এসব ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্টজনরা।

রোববার (১৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে  আয়োজিতটেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট প্রযুক্তিসেবা রাজনৈতিক ভাবনাশীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্ব সঞ্চালনায় আলোচনা সভায়  বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সাইবার সিকিউরিটি ইস্যুতে একজন নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করি। কিন্তু বাস্তবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে আমাদের নিরাপত্তার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যেকোনো সময় যেকোনো ইস্যুতে কোনো মানুষকে ইচ্ছা করলে সাইবার বুলিং করে তার চরিত্র হনন করতে পারে। একজন নাগরিকের সারা জীবনের অর্জনটাকে কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ করে দিতে পারে। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমরা আছি, যেখানে প্রতিদিন মানুষ আতঙ্ক উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে। যারা এসব কাজগুলো করছেন দেশে বা বিদেশে তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে  সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো নাগরিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করছে সেগুলো চিহিৃত করে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন করে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে এগুলো সমাজের নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এই প্রযুক্তির সেবা নামে নতুন দুর্যোগ, নতুন বিপদ আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ২৪ জুলাইয়ের পর মুখে সংস্কারের কথা বললেও গত ১০ মাসে মিডিয়া স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেনি। যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন তাদের অনেককেই নানা ভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এখনো মিডিয়া স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে না।  তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। গত আট মাসে এই সেক্টরে দুনীতি অনিয়মে ১০০ ভাগের এক ভাগও গণমাধ্যমে উঠে আসেনি।

সাইবার অধ্যাদেশ ২০২৪ বিষয়ে সমালোচনা করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, যেটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটিতে নাগরিকের সুরক্ষার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই, অরক্ষিত। রাষ্ট্রের কাজের সুবিধার জন্য নিজের মতো করে সংস্কার করা হয়েছে। এটাকে নাগরিকের সুরক্ষার উপযোগী করে প্রকাশ করা সময়ের দাবি।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আমরা সবাই দেশের আইসিটি টেলিযোগাযোগ সেবার মান উন্নয়নের কথা বলি। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন গত এক যুগ ধরে মানুষের ইন্টারনেট সেবার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যারা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলেন তাদের কণ্ঠরোধ করার নতুন কৌশল সৃষ্টি হয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক।

এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গত আট-নয় মাস ধরে শুনছি ইন্টারনেটের দাম কমছে, উন্নয়ন হচ্ছে, বাস্তবে কিছুই নেই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন জনগণের অধিকার নিয়ে যে কথা বলছে, আমরা দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি গ্রাহক অধিকার নিয়ে কাজ করা মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ করবো।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, এই সরকারকে আমরাই মেন্ডেট দিয়ে ক্ষমতায় রেখেছি। তারা অঙ্গিকার করেছিলেন বিবর্তনমূলক সকল কালাকানুন বাতিল করবেন। কিন্তু মাসেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইন কোনটাই বাতিল হয়নি। বরং নতুন করে গণমানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার কলকৌশল শুরু হয়েছে।

একই সুরে মানবাধিকার কর্মী আম-জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সাধনা মহল বলেন, সাইবার সুরক্ষা নামে নতুন করে ফ্যাসিবাদীর নতুন ধারণা দেওয়া হচ্ছে। দুনীতি অনিয়ম না কমে, আগের থেকে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ন্যাপ মাহসচিব এম গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া বলেন, ইতোমধ্যেই শোনা গেছে গত মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। আমাদের অধিকার আছে এই লুটপাটের জবাবদিহিতা চাওয়ার।

দীর্ঘ দিন ধরে টেলিযোগাযোগ খাতে সারা দেশের গ্রাহকের অধিকার সুরক্ষায় এবং সাধারণ মানুষের জন্য ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, আলোচনা সভা করে আসছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির বিগত দিনের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সংগঠনটির কার্যক্রম নিয়ে ফ্রিল্যান্সার আইসিটি উদ্যোক্তা এইচ আলী বলেন, ১০ বছর ধরে  দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রাহকের অধিকার, মোবাইল ফোনকলের সেবার মান, মূল্য নির্ধারণ এবং নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। এসব কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত পাশাপাশি নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে অন্তর্বর্তী  সরকারের কাছে আবেদন এবং ইতিমধ্যে এই আবেদন সংবিধান সংস্কার  কমিশন এবং সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে।  মোবাইলে কলরেট ইন্টারনেট ডেটার মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা চাওয়া প্রতিবাদ,  অসাংবিধানিকভাবে গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ নজরদারির বিরোধিতা, ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার পক্ষে জনমত গঠন, অবৈধ ভ্যাট/চার্জ আরোপের বিরুদ্ধে অবস্থান, নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল ইন্টারনেট সেবার দাবিতে গণস্বাক্ষর স্মারকলিপি প্রদান, দুর্বল নেটওয়ার্ক বা কল ড্রপ সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, গ্রাহক প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনগত সামাজিক পদক্ষেপের দাবি এবং সরকারি নীতিমালায় অংশীদারিত্ব পরামর্শ প্রদান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাদের আলমাস, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূঁইয়া লেবার পার্টির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রমুখ। 

এছাড়াও আলোচনা সভায় আইসিটি টেলিকম খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, স্টেইকহোল্ডার সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এমআর/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর