নিরাপদে হাঁটলে ও সাইকেল চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে। একইসঙ্গে সাইকেল ব্যবহার মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং নিরাপদ, টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সে কারণে নিরাপদে হাঁটা ও সাইকেল চালানোর পরিবেশ নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) নানাবিদ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২৫ পালন করার অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে নিরাপদে হাঁটা ও সাইকেল ব্যবহারের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সিআইপিআরবির পক্ষ থেকে আট দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজনের বেশি পথচারী ও সাইকেল আরোহী। তাই এ বছরের এই সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘Make Walking Safe, Make Cycling Safe.’। যার মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে নিরাপদে হাঁটা ও সাইকেল চালনার পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকে।
নিরাপদ হাঁটা ও সাইকেল চালনা যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস করে, তেমনি মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং নিরাপদ, টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের পক্ষে সিআইপিআরবির মনববন্ধন থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা নীতিনির্ধারকদের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু চাওয়া হলো:
বিজ্ঞাপন
# দেশের সকল ফুটপাত ও সড়কগুলো পথচারীদের জন্য নিরাপদ করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
# ফুটপাতগুলো এমনভাবে নকশা করা, যাতে তা হাঁটা ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা না যায়।
# ফুটপাত থেকে হকার, নির্মাণসামগ্রী, ভ্রাম্যমাণ দোকান- ইত্যাদি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা।
# ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল ও সাইকেল চলাচল বন্ধ করা।
# শহর এলাকায় স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য হাঁটা ও সাইকেল চালানোর জন্য পথচারী ও সাইকেলবান্ধব নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো তৈরি করা।
# সাইকেলকে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ বাহন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া।
# পথচারীদের রাস্তা পারাপারে সতর্ক হওয়া, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা, নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হওয়া- প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া।
# ব্যক্তিগত ও গণপরিবহনের চালকদের পথচারীবান্ধব আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

মানববন্ধনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, পঙ্গুত্ব ও অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এসডিজি ২০৩০-এর লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে , সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই লক্ষ্যে জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে নানা উদ্যোগ। যার মধ্যে রয়েছে ‘Global Plan for Second Decade of Action for Road Safety-2021-2030’ ঘোষণা, ‘Safe System Approach’ প্রস্তাব, প্রতি বছর রোড সেফটি সপ্তাহ পালন, রোড ক্র্যাশে নিহতদের স্মরণে ‘Day of Remembrance’ উদযাপন ইত্যাদি।
মানববন্ধনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় রোধে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা এবং এতে হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০১৩’ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় ৫–২৯ বছর বয়সি শিশু ও তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং সব বয়সের মানুষের মৃত্যুর ১২তম প্রধান কারণ।
এতে আরও জানানো হয়, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এবং দুই থেকে পাঁচ কোটি মানুষ আহত হয়। এসব হতাহতের ৯২ শতাংশ ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। যা উন্নত দেশের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও চিত্র প্রায় একই।
তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই উর্ধ্বমুখী হার সহনীয় মাত্রায় রাখতে দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। পাশাপাশি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে জনসাধারণকে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, কাজী বোরহান উদ্দিন, চন্দন লাহিড়ী, ডা. সামিদ সিদ্দিকী, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল করিম প্রমুখ।
বিইউ/এএইচ

