ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্যর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভিসি ও প্রক্টরের ওপর দোষ চাপানোকে ‘সত্য গোপনের অপচেষ্টা’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম। বুধবার (১৪ মে) মসকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সারজিস আলম লেখেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের ক্যাম্পাস অভিজ্ঞতা থেকে বলছি— সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টরের ওপর যেভাবে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে, তা মূলত সত্য আড়াল করার চেষ্টা মাত্র।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে। এই জায়গার নিয়ন্ত্রণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নয়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মাদক, চাঁদাবাজি, হেনস্তাসহ নানা অপরাধ চলে আসছে। এসব কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী কিছু সংগঠন ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা সিন্ডিকেট।’
তার অভিযোগ, উদ্যানের গেট ও আশপাশে বসানো হয়েছে শতাধিক ভাসমান দোকান। এতে একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতদের ভিড় বাড়ছে, অন্যদিকে ক্যাম্পাসের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
সারজিস আরও দাবি করেন, এই দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসায়নি। বরং ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ কিছু নেতাকর্মী এসব দোকান বসিয়ে নিয়মিত চাঁদা তোলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ এসব কর্মকাণ্ডে পরোক্ষভাবে যুক্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন এসব দোকান উচ্ছেদ করতে যায়, তখন বাধা দেওয়া হয়। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এসব দোকান আবার স্থাপন করা হয়। ফলে অপরাধের জন্য পরিবেশ তৈরি হয়।’
বিজ্ঞাপন
সারজিস আলমের মতে, টিএসসি ও শহীদ মিনার এলাকায় যেসব চায়ের দোকান, ভাসমান ব্যবসা কিংবা মাদকের সিন্ডিকেট চলছে, তারাই সাম্য হত্যার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী।
তিনি আরও বলেন, ‘টিএসসি কখনো শহরের মানুষের চা খাওয়ার বা আড্ডার জায়গা হতে পারে না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত জায়গা। অথচ সেখানে এখন প্রায় ৩০টি চায়ের দোকান বসানো হয়েছে। এটা শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন প্রশাসন এগুলো বন্ধ করতে চায়, তখন একটি শ্রেণি— যারা নিজেদের ‘প্রগতিশীল’ দাবি করে— তারাই এর বিরোধিতা করে। অথচ তারাই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ চায়।’
সারজিস দোয়েল চত্বর, মেট্রোরেল স্টেশন ও শহীদ মিনার ঘিরে বসানো বিভিন্ন ভাসমান দোকান, কারুশিল্প ও গাছের দোকানগুলোর কথাও উল্লেখ করেন। তার দাবি, এসব দোকানের কারণে বহিরাগতদের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, বাড়ছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। চাঁদাবাজির মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণও রয়েছে একটি প্রভাবশালী মহলের হাতে।
তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ভাইয়ের গায়ে একটা আঁচড় লাগুক, সেটাও আমরা চাই না। কিন্তু একদিকে আমরা প্রশাসনকে কাজ করতে দিব না, নিজেরা পরিবেশ নষ্ট করব, আবার কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের ওপর দোষ চাপাব— এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না।’
সারজিস আলম তার পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান— ক্যাম্পাসের সব ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করতে হবে, টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, কার্জন হল, মোকাররম ভবন ও মোতাহার ভবনেও ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে হবে, টিএসসিকে চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে মুক্ত করতে হবে ও বহিরাগতদের প্রবেশ এবং যান চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সাম্য হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো শিক্ষার্থী এমন নৃশংসতার শিকার না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
টিএই/এইউ

