বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ঢাকা

এক বছরে সোয়া লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ, নেপথ্যে যে কারণ জানা গেল

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

rohinga

মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে গত একবছরে নতুন করে আরও অন্তত এক লাখ আঠারো হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখনও প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।

হঠাৎ করে এমন রোহিঙ্গা প্রবেশের কারণ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরাকান আর্মির নির্যাতনের তথ্য। শুধু নির্যাতন নয়, রোহিঙ্গা যুবকদের ধরে নিয়ে মিয়ানমার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুর মুখে ফেলা হয় তাদের। সুন্দরী রোহিঙ্গা মেয়েদের তুলে নিয়ে যায় ইচ্ছামতো। এর পাশাপাশি রয়েছে মগ জাতিগোষ্ঠীর নির্যাতন।


বিজ্ঞাপন


কক্সবাজারে স্থানীয় বাংলাদেশিরা বলছেন নতুন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি এবং বিষয়টি স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য গভীর উদ্বেগের। নতুন এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধন, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে।

rohinga_camp_3
কক্সবাজারে পাহাড় ও বন ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্প।

কক্সবাজারে উখিয়া-টেকনাফ ঘুরে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা খতিয়ে দেখেছেন কী কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে কী তথ্য দিচ্ছেন নতুন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

রাখাইনে কী পরিস্থিতি?


বিজ্ঞাপন


মে মাসের শুরুতে স্বামী, দুই সন্তান ও বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন হামিদা বেগম। রাখাইনে পরিস্থিতি তাদের জন্য এতটাই খারাপ যে তার মাকে একা রাখাইনে ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আাশ্রয় নিলেও হামিদার পরিবার নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সরকারি-বেসরকারি হিসেবের বাইরে।

হামিদা ও তার পরিবার যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন তার কাছাকাছি আরেকটি ঘরে উঠেছেন সাবেরা নামের আরেক নারী। গত মার্চ মাসে তিনি ছয় শিশু সন্তান সঙ্গে করে পালিয়ে এসেছেন।

সাবেরা জানান, প্রায় চার মাস ধরে বুচিডং থেকে পায়ে হেঁটে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে মানুষের সাহায্য নিয়ে নিয়ে তিনি পালিয়ে আসেন। বলেন, ‘তিন চার মাইল করে হেঁটেছি। চার পাঁচ মাস লেগেছে। মানুষের সাহায্য নিয়ে নিয়ে এসেছি।’

সাবেরা বলছেন, কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা খাওয়ার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এটাই তিনি ও তার সন্তানদের জন্য নিরাপদ মনে করছেন।

rohinga_camp_2
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির।

‘বুচিডংয়ে বোমায় আমার মা, স্বামী, এক ছেলে মারা গেছে। কাজ নাই। মগের কারণে কাজ করা যায় না। মগেরা মারধর করে। কারো কাছে সাহায্য নেব সে অবস্থাও নেই। তাই কষ্ট করে চলে আসছি’, বলছিলেন সাবেরা।

নয় সদস্যের পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছেন বুচিডং থেকে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক মকবুল আহমেদ। রোহিঙ্গারা এখন কেন নিজ দেশে থাকতে পারছেন না সেই প্রশ্নে তিনি জানান, মিয়ানমার আর্মি এবং আরসা সদস্যদের সহযোগিতার অভিযোগ তুলে সেখানে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক নির্যাতন করা হচ্ছে। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে এই নির্যাতরেন অভিযোগ তুলেন তিনি।

‘আরসার কাছে ওষুধ বিক্রি করেছিস। ভাত খাইয়েছিস। তোরাও আরসার সমর্থক। এসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার বাড়ি নিয়েছে। বিরাট ওষুধে দোকান দখল নিয়েছে’ বলেন তিনি।

মকবুল আহমেদ জানান, গত মার্চে রোজার সময় তারা তিন শ রোহিঙ্গা একসঙ্গে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন। তার পরিবারের বাকি আট সদস্য আসেন তার দুদিন পর। রোহিঙ্গাদের নতুন করে আসার পেছনে রাখাইনে নিত্যপণ্যের মারাত্মক সংকট একটা বড় কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মকবুল আহমেদের কথায় খাদ্য সংকটের কারণে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী।

‘না ওষুধ আছে, না ডাক্তার আছে, না খাদ্য আছে। আমি দেখছি এক বস্তা চাল বার্মা টাকায় এক লাখ টাকা বিক্রি হয়। দুই কেজি পেঁয়াজ ৭০ হাজার, এক লিটার তেল বিশ হাজার টাকা। মরিচ এক কেজি আশি থেকে এক লাখ বার্মা টাকা (মিয়ানমারের মুদ্রায় সতের কিয়াত সমান বাংলাদেশি এক টাকা)। এই সংকটে কী করে থাকবে? রোহিঙ্গাদের পক্ষে সেখানে থাকা সম্ভব না।’

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের একটি ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ রফিক। তিনি এসেছেন ২০১৭ সালে। তিনি বলছেন, তার ক্যাম্পেই এক হাজারের বেশি নতুন পরিবার যুক্ত হয়েছে গত এক বছরে। কেন নতুন করে এই রোহিঙ্গাদের আসাটা বেড়ে গেল সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাখাইনে বসবাসের অবস্থা নেই। সব মিয়ানমার সরকার নয়, আরাকান আর্মি সব নিয়ন্ত্রণ করছে।’

arakan_army_1
মিয়ানমারে আরাকান আর্মির ট্রেনিং ক্যাম্পের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

‘রোহিঙ্গা যারা আছে, তারা নিরাপদ নয়। বিশ বছরের ছেলে দেখলে তাদের দলে নিয়ে যায়। মিয়ানমার আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় তাকে সামনে দিয়ে দেয়। সেখানে মারা যাচ্ছে। অথবা বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে তারা মেরে ফেলতেছে। মা বোনদের মধ্যে দেখতে ভালো লাগলে তাকে তুলে নিয়ে ইজ্জত ধ্বংস করে। নিজ বাড়িতে থাকতে পারতেছে না। আরাকান আর্মি যেখানে চায় সেখানে থাকতে হচ্ছে। পশুপাখির মতো পাহাড় জঙ্গলে রাখা হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে।’

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার সঙ্গে আরাকান আর্মির একটা দ্বন্দ্ব চলছে এমন আলোচনাও রয়েছে। ক্যাম্পে এসব সদস্যদের থাকার বিষয়টি অনেকে আঁচ করতে পারেন। এই সদস্যরা কিছুদিন ক্যাম্পে থাকে আবার মিয়ানমারে যাওয়া-আসা করেন বলেও তথ্য রয়েছে।

আরও পড়ুন-

‘আরসা নামে একটা সংগঠন আছে এটা মিথ্যা না। তারা রোহিঙ্গার পক্ষে দাঁড়ায়। ওখানে তারা মেহনত করতেছে। তাদের আত্মীয় স্বজন থাকতে পারে। ওখানে যে গ্রাম আছে সেখানে তাদের আত্মীয় স্বজন থাকতে পারে। খাওয়া দাওয়া করতে হয়। আরসার সহযোগী হিসেবে অভিযোগ এনে নির্যাতন করে। যারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধ কথা বলে তাদের অভিযুক্ত করে নির্যাতন করে।’

উদ্বেগ কোথায়?

নতুন আসা রোহিঙ্গারা জানান, নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গোপনে তারা নৌকায় পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন। টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ঘুরে শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন জায়গা দিয়ে লুকিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা।

naf_river_
টেকনাফে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বয়ে গেছে নাফ নদী।

বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতেই আর কোনো রোহিঙ্গা আশ্রয় না দেওয়ার নীতিগত অবস্থান ঘোষণা করেছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ থামানো যায়নি। এছাড়া গত আট বছর ধরে থাকার পরেও প্রত্যাবাসনের কোনো অগ্রগতি নেই। সবমিলিয়ে নতুন অনুপ্রবেশ এবং সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়রা বাংলাদেশিদের।

বাস্তবতা হলো, প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বর্তমান পরিস্থিতিতে অসম্ভব বলেই অনেকে মনে করছেন। অন্যদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলেও স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।

কক্সবাজারের নতুন অনুপ্রবেশ এবং সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা এবং উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়রা বাংলাদেশিদের।

কক্সবাজার উখিয়ায় স্থানীয় নাগরিকদের অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি নামের একটি সংগঠনের সভাপতি রবিউল হোসাইন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে মাদকসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। এছাড়া অনেকেই ক্যাম্পের বাইরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করছে। ক্যাম্পের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি বলেও ধারণা করছে অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি।

‘যখন প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা আসছে তখনই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েই যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে মায়ানমারে কোনো রোহিঙ্গা অবশিষ্ট থাকবে না যদি আমাদের সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করা না যায়। প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে।’

rohinga_camp
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিবিসিকে জানান, নতুন রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন চলছে। অনেকেই নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছেন। গড়ে প্রতিদিন ২০-৩০ জন এখনও বাংলাদেশে ঢুকছেন বলে তারা শুনছেন।

‘ওইখানে মূলত রোহিঙ্গারা মাঝখানে পড়েছে। আরাকান আর্মি যখন মংডু দখল নেওয়ার চেষ্টা করে আক্রমণটা চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে তখন রোহিঙ্গাদের আগমনটা বেড়ে যায়। এটা মে জুন মাসে বেড়ে যায় এরপর জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বরে আরও বেশি আসে। বিশেষ করে আমাদের সীমান্তে যখন কিছুটা শীথিলতা দেখা দেয় যখন বিজিবিকে আইন শৃঙ্খলার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় সে সময়টাতে অনেক লোক ঢুকে পড়ে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে এবার মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে বাংলাদেশ। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার নিশ্চই যারা ঢাকায় এগুলো ডিল করছেন তারা চেষ্টা করছেন যে নন স্টেট ফ্যাক্টর যারা আছেন ফিল্ডে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যদিও ফরম্যালি সেটা হয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা চেষ্টা করছেন। আমাদের টার্গেটটাই হচ্ছে প্রত্যাবাসন সুতরাং যেকোনো অ্যক্টরই থাকুক না কেন ফিল্ডে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।’

rohinga_2
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

তিনি আরও বলেন, ‘একটি মানুষকেও প্রত্যাবাসনে নিতে পারিনি। আমাদের কাছে প্রত্যাবাসন ছাড়া বিকল্প নেই। সরকার গুরুত্বসহকারে এগুচ্ছে। যদিও মানুষজন এখনও আসছে। পরিস্থিতি ওইপারে প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক না।সরকার নেপিডো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে।’

জাতিসংঘ কী বলছে

২০১৭ সালে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার পর কক্সাবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সরকারি হিসেবে এসব ক্যাম্পে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা জানাচ্ছে নতুন পুরোনো মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হচ্ছে। তবে এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

কক্সবাজারে অবস্থিত ইউএনএইচসিআর'র মুখপাত্র 

sharmin_nijman_
শারি নিজমান

 বলেন, সেখানে মানবিক সংকট এবং নিরাপত্তার অভাবেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের অনুকূল নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‘তাদের দেশত্যাগের কারণ আছে। নিরাপত্তার জন্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসে শরণার্থী শিবিরে তারা এই পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছেন। এর অর্থ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বর্তমান পরিস্থিতি তাদের ফেরার জন্য মোটেও অনুকূল নয়। সেখানে তারা নিরাপদ নয়, সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অবস্থা নেই, মৌলিক চাহিদা পূরণের সুযোগ নেই, চলাফেরার স্বাধীনতা নেই। যতদিন পর্যন্ত এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে সেখানে তাদের ফেরার জন্য উপযুক্ত নয়।’

ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর