বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ঢাকা

এনআইডির তথ্য ফাঁস ঠেকাতে যে পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২৫, ০৯:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

EC
নির্বাচন কমিশন ভবন। ফাইল ছবি

নাগরিকদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের বা এনআইডির তথ্য ফাঁস ঠেকাতে পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন থেকে ভান্ডার থেকে  সেবাদাতা কোনো প্রতিষ্ঠানকে নাগরিকদের পুরো তথ্য দেবে না সংস্থাটি। 

এক্ষেত্রে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো তথ্য যাচাই করতে চাইলে ম্যাচ বা নো ম্যাচ জানিয়ে দেবে ইসি।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (৬ মে) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ মে থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে নাগরিকদের তথ্য যাচাই করে নেয় তাদেরকে আমরা এখন থেকে নাগরিকদের পুরো তথ্য দেব না। তারা যে তথ্য যাচাই করতে চাইবে তা যদি আমাদের সার্ভারে মিলে যায়, তাহলে আমরা ‘ম্যাচ’ জানিয়ে দেব আর যদি না মেলে তাহলে আমরা ‘নো ম্যাচ’ জানিয়ে দেব। এতে নাগরিকদের তথ্য ও জাতীয় তথ্য ভান্ডার আরও সুরক্ষিত হবে।’

আরও পড়ুন: এনআইডির তথ্য ফাঁসে জড়িত ৫ প্রতিষ্ঠান

ইসি কর্মকর্তা জানান, ‘এনআইডির ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি ১৮৬টি প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের বিভিন্ন ধরণের সেবা দিয়ে থাকে, যাদেরকে আমরা সার্ভিস পার্টনার বলি। এদের মধ্যে ব্যাংক, বিমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে।‘


বিজ্ঞাপন


তিনি জানান, ‘তথ্য যাচাই করতে এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে চুক্তি করে নেয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সেবাগ্রহীতার এনআইডির তথ্য নিশ্চিতে করতে প্রতিষ্ঠানগুলো ইসির সার্ভার থেকে তথ্য যাচাই করে থাকে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবার তথ্য যাচাইয়ে দুই টাকা আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবার তথ্য যাচাইয়ে পাঁচ টাকা করে ফি দিয়ে থাকে।’

জানা যায়, এ তথ্য যাচাইয়ের জন্য ইসি একটি নির্দিষ্ট লিংক দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যার মাধ্যমে তারা ইসির এনআইডি তথ্য ভান্ডার থেকে এনআইডি নাম্বার দিয়ে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পাঠালে সংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবিসহ এনআইডিতে প্রদর্শিত তথ্যগুলো চলে আসে। এই সুযোগেই তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে।

২০২৩ সালের ৬ জুলাই আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ বাংলাদেশের একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হয়- এমনটি দাবি করলে ইসি তা অস্বীকার করে বলে সার্ভারে কোনো ত্রুটি নেই। একই সঙ্গে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। পরবর্তীতে তারা সার্ভিস পার্টনারদের দিক থেকে তথ্য ফাঁসের বিষয়টির সত্যতা পায়।

এরপর চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ইসি সচিব আখতার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- স্বাস্থ্যা অধিদপ্তর, ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও অর্থমন্ত্রণালয়ের আইবাস। 

আরও পড়ুন: নাগরিক তথ্য বিক্রি করা হয় ২০ হাজার কোটি টাকায়!

এসব প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানিয়েছিলেন, বিষয়টি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে ততটুকু প্রয়োজন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যালোচনার পর সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সার্ভিস পার্টনাদের আর ঢালাও তথ্য দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে আট ধরণের তথ্য পাবে তারা।

সার্ভিস পার্টনার থেকে কোনো ব্যক্তির এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, নাম (বাংলা), নাম (ইংরেজি), পিতার নাম, মাতার নাম, স্বামী/স্ত্রীর নাম ও ঠিকানা (বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা); এই আট ধরণের তথ্য চাইলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কেবল ‘ম্যাচ’ অথবা ‘নো ম্যাচ’ আকারে জানিয়ে দেওয়া হবে। 

এদিকে নির্দেশনা পাওয়ার পর সার্ভিস পার্টনারগুলোকে চিঠি দিচ্ছেন এনআইডি বৈধ ও সঠিকতা যাচাই শাখার সহাকারি পরিচালক মুহা. সরওয়ার হোসেন।

চিঠিতে বলা হচ্ছে, জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, সাইবার হুমকি মোকাবিলা, তথ্যের অপব্যবহার রোধ ইত্যাদি বিবেচনায় এনআইডি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান যাচাই পদ্ধতির পরিবর্তে 'মিলেছে/মেলেনি’ পদ্ধতি চালুকরণের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এজন্য আগামী ১৫ মে’র মধ্যে প্রয়োজনী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

এমএইচএইচ/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর