সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এবার গ্রীষ্মে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

এবার গ্রীষ্মে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

এবার গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে। একইসঙ্গে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফয়জুল কবির খান।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ‘সেমিনার অন এনার্জি ক্রাইসিস: ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রাখার চেষ্টা করব। তবে সম্পূর্ণরূপে লোডশেডিং মুক্ত হবে না। এর জন্য যা করণীয় সেটাই করব। আমরা বাড়তি এলএনজি ও কয়লা আনার চেষ্টা করছি। জ্বালানি তেলের ব্যবহার সীমিত রাখা হবে।

ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) মো. শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম। আলোচক ছিলেন ভোক্তা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আমরা লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করব। আমাদের ১৬,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সেখানে ১৭৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৮,০০০ মেগাওয়াট। এজন্য আমরা বাড়তি এলএনজি ও কয়লা আনার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতি নিম্নমুখী ছিল, এখন আর নেই। আমরা আশা করছি, এটা ম্যানেজ করতে পারব। তবে লোডশেডিং হবে না— এটা বলতে পারব না। কিন্তু লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে। একইসঙ্গে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না।  


বিজ্ঞাপন


উপদেষ্টা ফয়জুল কবির খান বলেন, যেকোনো সময় একটা বড় পাওয়ার প্ল্যান্ট বসে যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে এগুলো বেশি হয়। সেগুলো মাথায় রেখেই এলএনজি আমদানি করব। তারপর কয়লা আমদানি করব। আমরা সব দিক থেকেই চেষ্টা করছি, আমরা জ্বালানি আমদানি করতে পারব। তবে সম্পূর্ণরূপে লোডশেডিং মুক্ত হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের খরচ কমাতে হবে। সেজন্য আমাদের জ্বালানি তেলের ব্যবহার মিনিমাম রেখে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রাখা হবে। একটা জিনিস মনে রাখবেন— ক্রাইসিস বললেই রাজনীতিবিদদের সুবিধা হয়। পাওয়ারে থাকে ক্রাইসিসের নাম করেই। তাই ক্রাইসিস শব্দটি ব্যবহারের আগে একটা মাত্রা থাকতে হবে। ক্রাইসিস কখনো সমস্যা সমাধান করে না, বরং উল্টোটা হয়। এটাকে অনেকেই সুযোগ হিসেবে দেখে। ফলে ছোট একটা ক্রাইসিস বড় ক্রাইসিস-এ পরিণত হয়।

মূল প্রবন্ধে জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, দেশে নতুন করে গ্যাসের ক্রাইসিস শুরু হয়েছে, তাহলে নতুন শিল্প কীভাবে হবে? ২০৩১ সালে আমাদের নিজস্ব গ্যাসের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা ২০০০ এমএমসিএফডি উৎপাদন করতে পারি। তবে বাংলাদেশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা আমরা সার্চ করতে পারিনি। এখন আমাদের যা আছে, তার তিনগুণ বাড়াতে হবে। শেভরন যতটুকু চায়, তাকে সেটা করতে দিতে হবে।

আলোচকের বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের জ্বালানি নীতির সংস্কার প্রয়োজন। এটা খুব দ্রুত নিতে হবে। যেখানে জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে থাকবে। একই সঙ্গে ২০৪১ সালে আমরা জ্বালানিকে কী অবস্থায় দেখতে চাই সেই জিজ্ঞাসা থাকতে হবে। আমরা যেভাবে কাতার ও ইউএই-এর সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি করতে যাচ্ছি, সেটা দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নীতির সঙ্গে যায় না।

তিনি আরও বলেন, আমরা যেভাবে এলএনজিতে যাচ্ছি, এজন্য নতুন করে জ্বালানির প্রাক্কলন করা দরকার। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানির প্রক্ষেপণ যেটা আছে, সেটা সংশোধন করা প্রয়োজন। আমরা দেখছি, এলএনজি আমদানিকে যেভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে, এতে বিগত সরকারের মতো দেশীয় গ্যাস সম্পদকে নিরুৎসাহিত করার মতো হয়ে যাবে। কোনোভাবেই এলএনজিকে উৎসাহিত করা যাবে না, ন্যূনতম যেটুকু দরকার, সেটা করতে হবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গ্যাস খাতে আমাদের পর্যাপ্ত নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমি তো মনে করি, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে অর্থনীতির সংকট যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তাতে যদি অর্থের দরকার হয়, তাহলে অন্য যেকোনো জায়গা থেকে অর্থ এনে গ্যাস খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থ দেওয়া উচিত। এজন্য পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলা উচিত। প্রয়োজনে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি আর্থিক রিকভারি প্ল্যান তৈরি করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে তিনি কিছু স্বল্প মেয়াদি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।  

সেগুলো হলো: আমাদের ২০০০ এমএমসিএফডি (বর্তমানে = ১,১০০ এমএমসিএফডি) প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষম রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল স্থাপন করতে হবে। এলপিজি বিতরণ নেটওয়ার্ক উন্নত করা এবং নগর পরিবার ও পরিবহনে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রূপান্তর হিসেবে ৪-৫ মিলিয়ন টন এলপিজি আমদানি সহজতর করতে হবে।

এছাড়া নিজস্ব কয়লা খনন (প্রথম অগ্রাধিকার) অথবা কম খরচে সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে কয়লা খনি কিনতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রবেশ বর্তমান ২ থেকে কমপক্ষে ১০ শতাংশে বৃদ্ধি করতে হবে।

এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর