রাজধানীর ওয়ারীর একটি বাসা থেকে মোহাম্মদ মুঈদ (৩২) ও আইরিন আক্তার রত্না (৩৫) নামের এক দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওয়ারী থানার ওয়ার স্ট্রিটের জমজম টাওয়ারের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে এই মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউছার আহম্মদ জানান, খবর পেয়ে রাতে ওই বাসা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। স্বামী মুঈদের দেহ পচন ধরে যাওয়া অবস্থায় ছিল এবং স্ত্রী রত্নাকে একই বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিআইডি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে।
বিজ্ঞাপন
এসআই কাউছার আরও জানান, ওই ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই থাকতেন এবং তাদের সঙ্গে অন্যদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। একজন খণ্ডকালীন গৃহকর্মী সেখানে কাজ করতেন, যিনি গত দুই মাস ধরে বেতন পাননি এবং রোজার ঈদের পর বেতন দেওয়ার কথা ছিল। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গৃহকর্মী বেতন নিতে এসে অনেকক্ষণ কলিং বেল চাপলেও কোনো সাড়া না পেয়ে ফিরে যান। এরপর শনিবার বিকেলে তিনি বাড়িওয়ালার মাধ্যমে আবার ওই বাসায় যান। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় তারা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরের দরজাগুলো খোলা ছিল।
পুলিশ কর্মকর্তা কাউছার জানান, মৃতদেহ দুটির পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘বিয়ের পর আমার বাবা-মা, স্বামীর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই। আমাদের দুজনের মরদেহ ঢাকায় কোনো সরকারি কবরস্থানে দাফন দিয়েন। আমার এবং আমার স্বামীর বাড়িতে নেওয়ার দরকার নাই।’
এসআই আরও জানান, স্বামী মুঈদ দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন এবং স্ত্রী রত্না সাধারণত বাইরে বের হতেন না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী চার-পাঁচ দিন আগে মারা গেছেন। এই কারণে স্ত্রী শোকাহত হয়ে কোনো বিষাক্ত দ্রব্য সেবন করে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে, মৃত মুঈদের বড় ভাই ডা. মুগলী সানি জানান, তাদের বিয়ে হয় ২০০৯ সালে এবং তাদের কোনো সন্তান ছিল না। তবে ২০২১ সালের পর থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না এবং তারা ঢাকার কোথায় থাকতেন, তা তাদের জানা ছিল না। তার ভাইয়ের আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশের মাধ্যমে তারা তাদের মরদেহ উদ্ধারের খবর পান। তবে তাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না।
বিজ্ঞাপন
ডা. মুগলী সানি আরও জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার আড়াইকান্দি এবং তাদের বাবার নাম মো. মুসা। মৃত রত্নার বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় এবং তার বাবার নাম জয়নাল আবেদিন।
/এএস

