মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ঢাকা

প্রাণঘাতী বজ্রপাত বাড়ছে, করণীয় কী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রাণঘাতি বজ্রপাত বাড়ছে, করণীয় কী

দেশে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুম। গত কয়েকদিন ধরে ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বেড়েছে বজ্রপাতের তীব্রতা। এসব বজ্রপাতে মাঠে-ঘাটে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। বুধবার (১৬ এপ্রিল) একদিনেই গাজীপুর, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদীতে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল–মে) এই দুই মাসে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে হুটহাট বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হয়, যাকে কালবৈশাখী বলে। এই ঝড় উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে একে ইংরেজিতে নরওয়েস্টার বলা হয়।


বিজ্ঞাপন


কালবৈশাখী ছাড়াও প্রাক-বর্ষাকাল ও বর্ষাকালে বাংলাদেশে বজ্রঝড় হয়। মাস হিসাবে বেশি বজ্রঝড় হয় মে মাসে, গড়ে ১৩ দিন। এপ্রিলে ৯ দিন এবং মার্চে ৫-৬ দিন। সবচেয়ে শক্তিশালী বজ্রঝড় এপ্রিল ও মে মাসে হয়ে থাকে। এর সঙ্গে থাকে দমকা বাতাস এবং ঝড়ো হাওয়া; কখনো কখনো শিলাবৃষ্টি।

07966f8fa8b05c40193a13c9d1b4fed6d8346254eeecd890

গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, টাঙ্গাইল, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয়ে থাকে। তাণ্ডবতাও বেশি হয়ে থাকে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যায়। গত বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতের ফলে ২ হাজার ১৪২ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৫৩৮ জন।


বিজ্ঞাপন


বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বড় গাছের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে ব্যাপকহারে বজ্রপাত প্রতিরোধক বা লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন।

বজ্রপাতের সময় নিজেকে বাঁচানোর বিষয়টি সম্পর্কে সবারই সচেতন থাকা উচিত। কারণ বজ্রপাতে মৃত্যু না হলেও এর আঘাতে ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পেশিতে ব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, হকচকিয়ে যাওয়া, কানে কম শোনা, খিঁচুনি, পুড়ে যাওয়া, আচরণগত পরিবর্তন, চোখের ছানি এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো ভয়াবহ বিষয়ও ঘটতে পারে।

বজ্রপাতের সময় করণীয়

১. যথাসম্ভব ঘরের ভেতর থাকুন বা কংক্রিটের স্থাপনার নিচে আশ্রয় নিন। কারণ বজ্রঝড় সচরাচর ৩০-৪৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হয়। এই সময়টিতে আপনি ঘরে থাকতে পারলেই ভালো।

২. ঘরে বা বাইরে খালি পায়ে থাকা যাবে না। গভীর ও উলম্ব আকৃতির মেঘ দেখলেই বুঝবেন বজ্রঝড় হতে পারে। যদি জরুরি প্রয়োজন থাকেই তাহলে রাবারের জুতো পরে বাইরে যাবেন।

lightning-27-1472288768-1530015296

৩. উঁচু স্থান এড়িয়ে চলুন। কারণ উঁচু স্থানেই বজ্র আঘাত হানে বেশি।

৪. গ্রামীণ অঞ্চলে মাঠে অবস্থান করলে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়ান। তারপর কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসুন।

৫. বজ্রপাতের জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন। জানালার কাছাকাছি থাকবেন না।

৬. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করেও বহু মানুষ আহত হয়।

৭. বজ্রপাতের সময় টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। বজ্রবৃষ্টির সময় এগুলোর প্লাগ খুলে রাখুন।

৮. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে গাড়িটি নিয়ে কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। গাড়ির কাচেও হাত দেবেন না।

আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

বৃহস্পতিবার আবারও ঢাকা শহরের ওপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টির অতিক্রমের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।

এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, মুন্সিগন্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী জেলায় ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই একই মেঘের কারণে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর জেলার উপরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, আজ ঢাকা ও খুলনা বিভাগের প্রত্যেকটি জেলার ওপর দিয়ে বৃষ্টি অতিক্রম করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগ, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোয় রাত ১০ টার মধ্যে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর