রাষ্ট্র সংস্কারে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি প্রবর্তন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগসহ চার প্রস্তাব দিয়েছেন সাংবাদিক ও লেখক, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
শনিবার (১২ এপ্রিল) রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ক্লাবে 'রাষ্ট্র সংস্কার” রাজনীতি প্রভাবমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী' শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব প্রস্তাবনা দেন।
বিজ্ঞাপন
রাওয়ার চেয়ারম্যান কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল অলি আহমদ, বীরবিক্রম (অব.)। অনুষ্ঠানে সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, সংসদীয় পদ্ধতিতে আমৃত্যু ক্ষমতা দখলে রাখার সুযোগ আছে, সেই সুযোগ নিয়েই শেখ হাসিনা পুলিশ, র্যাব, এবং ডিজিএফআই'কে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতকে দমন করেছেন, জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি প্রবর্তনের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার সময় এসেছে। আমার প্রস্তাব হলো, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সর্বোচ্চ দুইবার পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য একজন নাগরিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন। এই দুই মেয়াদ উপর্যুপরি হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি যে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির কথা প্রস্তাব করছি সেখানে নির্বাচিত সংসদের সাথে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার যথেষ্ট ভারসাম্য থাকতে হবে। আমার প্রস্তাবিত প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান কিংবা এরশাদের মতো একক ক্ষমতাশালী হবেন না। প্রেসিডেন্ট এবং সংসদের মধ্যকার ক্ষমতার ভারসাম্যের রূপরেখা প্রস্তাব করবার জন্য আমাদের সংশ্লিষ্ট বিশেষৰজ্ঞদের কাছ থেকে একাধিক প্রস্তাব, সেমিনারে বিতর্ক এবং রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের প্রয়োজন হবে। আমি মনে করি, প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতাসীন থাকার সুযোগ যদি সংবিধানে রহিত করা থাকে এবং প্রেসিডেন্ট ও সংসদের মধ্যে যদি ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা যায় তাহলেই ফ্যাসিবাদের উত্থানের সুযোগ আমরা বন্ধ করতে সক্ষম হব।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় প্রস্তাব হিসেবে মাহমুদুর রহমান বলেন, সংসদ নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধানে পুনঃসংযোজন করতে হবে। আমরা দেখেছি যে, সর্বশেষ প্রধান বিচারপতিকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান করার পদ্ধতি রাজনীতিবিদদের অসততা এবং অসহযোগিতার কারণে কেবল ব্যর্থই হয় নাই, সেই সঙ্গে বিচার বিভাগও কলুষিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের নতুন কোনো পদ্ধতির কথা চিন্তা করতে হবে। আমি রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরুর জন্য কেয়ারটেকার সরকারের একটি প্রাথমিক প্রস্তাব উত্থাপন করছি। আমার প্রস্তাব অনুযায়ী ৯০ দিনের মেয়াদের নির্বাচনকালীন সরকারে ১১ জন সদস্য থাকবেন। নির্বাচিত সংসদের সরকারী ও বিরোধী দল ৫ জন করে এবং প্রধান বিচারপতি একজন সদস্যের নাম প্রেসিডেন্টের কাছে প্রস্তাব করবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই ১১ জন সদস্য গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবেন।
তৃতীয় প্রস্তাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর সাথে সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সমন্বয় করার উদ্দেশে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ সৃষ্টির জন্য আমি প্রস্তাব করছি। এই পদে যিনি আসবেন তার আধুনিক ও সার্বিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞান থাকার পাশাপাশি বিশ্ব ভূরাজনীতি বিষয়েও ব্যুৎপত্তি থাকতে হবে। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজারের পদ রয়েছে। এই পদে সামরিক কিংবা বেসামরিক ব্যক্তি বিবেচিত হতে পারবেন।
চতুর্থ প্রস্তাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, যে সকল সেনা অফিসার শেখ হাসিনার আমলে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের দায়ে, বিশেষ করে আয়না ঘর সৃষ্টি এবং মহান জুলাই বিপ্লবে গণহত্যায় সম্পৃক্ত থেকেছেন তাদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
টিএই/জেবি