বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ভূমিকম্পের সরঞ্জাম কেনার টেন্ডারে অনিয়ম, পিডির দাবি সব হয়েছে নিয়ম মেনে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমিকম্পের সরঞ্জাম কেনার টেন্ডারে অনিয়ম, পিডি দাবি নিয়ম মেনেই হয়েছে সব

মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের খবর আসে। এসব ভূমিকম্পে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী এই ভূমিকম্পের ভয়াবহতা আমলে নিয়ে ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও যন্ত্রপাতি কিনতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি কেবল দরপত্র আহ্বান করেছে মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, বিপুল অংকের এই প্রকল্পে কাজ পাওয়া বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ নামের প্রতিষ্ঠানের ভূমিকম্প সম্পর্কিত কোনো সরঞ্জাম সরবরাহের অভিজ্ঞতা নেই।


বিজ্ঞাপন


প্রকল্প পরিচালক এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন এমন দাবি করে মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবকে দেয়াও এই অভিযোগের সঙ্গে টেন্ডার সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রও সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। একই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

তবে এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা সরকারের যুগ্ম সচিব কাজী শফিকুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম মেনে সর্বনিম্ন দরদাতাকে ভালো মানের সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারবেন এমন প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে যদি কারও অভিযোগ থাকে তাহলে নিয়ম মেনে অভিযোগ করার সুযোগ আছে। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ সত্য হলে কার্যাদেশ বাতিলও হতে পারে।’

কত টাকার টেন্ডার, কেনা হবে কোন কোন সরঞ্জাম


বিজ্ঞাপন


ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। এজন্য সরঞ্জাম কেনাসহ সার্বিক কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ ছিল ২০২৪ সাল পর্যন্ত। ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার নানা সরঞ্জাম কেনার টেন্ডারই করা হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।

টেন্ডার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের প্রস্তুতির জন্য সরঞ্জামের মধ্যে লাইভ জ্যাকেট, রেডিও, লাইভ বয়া, টর্চ লাইট, সিগন্যাল ফ্লেয়ার কেনা হবে।

কী আছে অভিযোগপত্রে?

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের অধীনে সরঞ্জাম কেনার জন্য বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজকে কাজের অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টেন্ডারে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী তাদের কোন ধরনের যোগ্যতা নেই। এ কাজ পেতে তারা তাদের জমা দেওয়া অভিজ্ঞতার সনদ প্রকৃত প্রকল্পের চাহিদার সঙ্গে মেলে না। বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠানটি 'বিল্ডিং লিফট সার্টিফিকেট' জমা দিয়েছে, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সরবরাহের অভিজ্ঞতার সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্কিত নয়। এর ফলে তাদের প্রস্তাবটি প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়ে এবং এটি প্রতারণা। এই ধরনের অসঙ্গতি একটি প্রধান বিচ্যুতি হিসেবে গণ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে পাবলিক প্রোকিউরমেন্ট রুলস অনুযায়ী বিডার হিসেবে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজের এজিএম মো. তাওহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটি সত্য নয়। বরং এর পেছনে বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে। আমরা ২০২৪ সালেই এ সংক্রান্ত বড় একটি প্রকল্পে মালামাল সরবরাহ করেছি। এবারও সব শর্ত মেনেই সর্বনিম্ন দারদাতা হয়েছি। আমরা কখনো কোনো কাজে অনিয়ম করিনি। বরং আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানই ২০২৩ সালে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এবার ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার কেনাকাটার যে কথা বলা হচ্ছে সেটিও সঠিক নয়। এরকম কোনো টেন্ডার ওই প্রজেক্ট এ হয়নি৷ ভূমিকম্প সংক্রান্ত এ প্রকল্পে সর্বনিম্ন ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার একটি টেন্ডার হয়েছে। চাইলেই এগুলো অনলাইনে যাচাই করার সুযোগ আছে।

এদিকে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘এইচটিএমএস’এর ডিরেক্টর আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে একত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে। আমরাও মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি। দুদকেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিটের প্রস্তুতি চলছে। প্রকল্প পরিচালক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ কাজ দিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস সেন্টার নেই, জনবল নেই। টেন্ডারের চাহিদার সঙ্গে মালামাল সরবরাহের অভিজ্ঞতাও নেই।

এদিকে অভিযোগ অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম ঘটলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

তবে প্রকল্প পরিচালক কাজী শফিকুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আসলে টেন্ডারে অংশ নেয় অনেকে। কাজ কিন্তু একজন পায়। ফলে যারা বঞ্চিত হয় তাদের অনেক অভিযোগ থাকে। এটা ইজিপি পদ্ধতিতে টেন্ডার হয়েছে। আমরা বিধিবিধান ফলো করে কাজ করছি। এরপরও কোনো সমস্যা থাকলে প্রথমে সংক্ষুব্ধ পক্ষকে পিডির কাছে অভিযোগ দিতে হবে। পরে ধাপে ধাপে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু যারা অভিযোগ করেছেন তারা সরাসরি মন্ত্রণালয়ে চলে গেছেন।

সর্বনিম্ন দরদাতা এবং মানসম্পন্ন সরঞ্জাম সরবারহ করার সক্ষমতা আছে তেমন প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তার মধ্যে ব্লকড হওয়া প্রতিষ্ঠানও আছে।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর