মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘শিল্পায়ন তরান্বিত করবে পদ্মা সেতু, প্রয়োজন গ্যাস সংযোগ’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২২, ০২:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

‘শিল্পায়ন তরান্বিত করবে পদ্মা সেতু, প্রয়োজন গ্যাস সংযোগ’

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। তবে সেখানে ব্যবসাবান্ধব, পরিবেশসম্মত ও পরিকল্পিত শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি পরিবেশ। গ্যাস সংযোগসহ সেটি নিশ্চিত করতে পারলে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আগামী দিনে দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে উন্নত এলাকা।

শনিবার (১১ জুন) দুপুরে বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত 'পদ্মা সেতু: দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুনন' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 


বিজ্ঞাপন


ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম মাসুম। 

পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কথা তুলে ধরে সেমিনারের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একটা সেতুর জন্য এত মানুষ উন্মুখ হয়ে বসে আছে, এমনটা অবিশ্বাস্য ঘটনা। পদ্মা সেতু আসলে সারাদেশের মানুষের স্বপ্ন বুনন। এই মহাকাণ্ডের কান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

মন্ত্রী বলেন, বারবার বলা হয়েছে পদ্মা সেতু হবে না। কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন। অথচ এখন লোকজন নতুন কথা বের করছে। আমি বলবো, তোমরা যারা পাণ্ডিত্য দেখাচ্ছো তারা অন্য জায়গায় দেখাও। আমাদের তোমরা উৎসব করতে দাও। তোমরা পার্টিতে আসো, না হয় চুপ থাকো। 

ভোলা থেকে বরিশালের সঙ্গে সেতু নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখানে সেতু টেকনিক্যাল দিক ও অর্থনৈতিকভাবেও সম্ভব। সিরিয়াসলি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।  


বিজ্ঞাপন


প্রধান বক্তা মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাসের স্বপ্নগাধা হলো পদ্মা সেতু। কিন্তু এটি নিয়ে নোংরা রাজনীতি, খারাপ রাজনীতি হয়েছে। ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সবকিছু পেছনে ফেলে সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে। কিন্তু অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও এতদিন দীর্ঘসময় যাতায়াতে লাগার কারণে অনেক বড় গোষ্ঠী দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখায়নি। তবে সামনে দিনে 

অর্থনীতির নতুন দ্বার উম্মোচিত হবে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। আগামীতে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ সম্ভব হবে। এটা কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণেই হচ্ছে। 

পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা অসুস্থ রাজনীতির পরিচয়। আমরাও রাজনীতি করি। কিন্তু আওয়ামী লীগের সব কাজ ভালো সেটা বলার বা ভাবার কারণ নেই। কাজ করলে ভুল হতেই পারি। কিন্তু ভিন্ন রাজনীতি করার কারণেই ভালো কাজের সমালোচনা করা ঠিক না।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, পদ্মার উপর সেতু হবে এটা ভাবতেও পারেনি অনেকে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু করে এখন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। এর একমাত্র কৃতিত্ব তাঁর। কারণ অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে এই সেতু নিয়ে। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বরিশাল এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের অঞ্চলে যারা আছেন সেসব ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সেখানে পরিবেশটা খুব জরুরি। কেউ যদি আমার দখলে থাকবে এই এলাকা, অমুক এলাকা থাকবে অমুকের দখলে এমন মনোভাব থাকলে পদ্মা সেতু কিন্তু সেতুই থেকে যাবে। সময়মতো মাছ, ফল-সবজি সময়মতো ঢাকায় আসতে পারবে না। 

পণ্য নিয়ে আসতে পথে পথে বাধার সৃষ্টি হলে সঠিক সময়ে ঢাকায় পণ্য আসবে না। তাই আমাদের সামগ্রিক চিন্তা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা ভাবতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

জাহিদ ফারুক বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হলে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আগামী দিনে দক্ষিণাঞ্চল হবে সবচেয়ে উন্নত এলাকা। সে কারণে বরিশাল অঞ্চল নিয়ে সামগ্রিকভাবে ভাবতে হবে। ভোলা থেকে গ্যাস সরবারহ করা সম্ভব হলে বরিশালে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কুয়াকাটার ভাঙন ঠেকাতে ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি আমরা দ্রুত কাজ করতে পারবো। 

setu2

অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে লোহা দিয়ে বাঁধ দিলেও বাঁধ টিকবে না। কিন্তু যেই হোক অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী তাকে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইদানীং অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে পারলে নদীর বাঁধ টেকানো যাবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসলে সরকারের কাজ বাঁধ নির্মাণ করা। কিন্তু অবৈধভাবে বালু তোলা হলে আমাদেরই ক্ষতি, দেশের ক্ষতি। কারণ জনগণের টাকা দিয়েই সরকার উন্নয়ন কাজ করি। 

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা মেরিনা মীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। পদ্মা সেতু তার প্রমাণ। কিন্তু এতদিন বরিশাল অনেক কিছু দিলেও আমরা বরিশালের জন্য অনেক কিছুই করতে পারিনি। বরিশাল ভারী ও মাঝারি মানের শিল্প কম যে কারণে ঢাকায় প্রচুর মানুষ কাজ করে। এতদিনে ছোটখাটো শিল্প কারখানা গড়ে উঠলেও সামনে আরও গড়ে তুলতে হবে। একটি উন্নয়নযজ্ঞে যেসব খাতের মানুষ আছে তাদের এক হয়ে ভাবতে হবে।

মেরিনা বলেন, নদী ভাঙনের কারণে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানা করতে চাইলেও আতঙ্কে যেতে চান না। সে কারণে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজ বলেন, কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি বরিশালে পরিবেশবান্ধব শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরি হয় এমন শিক্ষায় জোর দিতে হবে।

তমাল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাতায়াতে সময় কমে আসবে। কিন্তু বরিশালের সঙ্গে যে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন তা অনেকটা মন্থর গতিতে এগিয়ে চলছে। বিশেষ করে ওপারের রাস্তাঘাট অনেক প্রকল্প থেমে আছে। 

বরগুনার পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পদ্মার এবারের পাশাপাশি পদ্মার ওপারের রাস্তা চারলেন করা। কারণ এখনই ওপারের মূল রাস্তা অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই এদিকটাতে গুরুত্ব দিতে হবে। 

মেয়র বলেন, রাস্তাঘাট ভালো হলে মাছসহ অন্যান্য সামগ্রী ঢাকায় পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় আনা সম্ভব হবে। এতে প্রান্তিক এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নিজাম উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এখনই বিসিকসহ অন্যান্য যেসব অর্থনৈতিকভাবে ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে জমি নেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই সহজ শর্তে, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার সুযোগ দিলে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে বরিশালে বিনিয়োগ করবেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামের মতো বরিশালে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা যারা এইখাতে জড়িত তারা অনেক উপকৃত হবো। আমাদের খরচও কমবে। 

নিজাম উদ্দিন বলেন, জেনেছি এই শিল্পের জন্য মাত্র সাড়ে শতাংশ শর্তে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি যাতে করে উপযুক্ত লোকজন পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও কবি তৌহিদুল হক। 

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব, সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাদিরা কিরণ, জেবেল রহমান, মানিক লাল ঘোষ, বিডিজেএর সহসভাপতি এম এম বাদশা, সংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক সানবির রুপল প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বিডিজেএর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সৈকত।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর