বাহাত্তরের সংবিধানে সাধারণ মানুষের মুক্তি না আসায় সংস্কার জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সরকার নতুন বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সংবিধান চূড়ান্ত করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে রাষ্ট্র ধর্মের বিষয়ে অনেকের দ্বিমত আছে। এছাড়া সব বিষয়ে সবাই একমত।
বিজ্ঞাপন
‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
বাহাত্তরের সংবিধানকে একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ দাবি করে আলী রীয়াজ বলেন, এই সংবিধানে সাধারণ মানুষের মুক্তি আসেনি। তাই সংবিধান সংস্কার জরুরি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘এই যে রাজনৈতিক দল তার যে আদর্শ সেটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এই বিবেচনা থেকে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এই কাজটি রাষ্ট্রের আদর্শ হিসেবে এখন আর গ্রহণযোগ্য নেই।’
বিভিন্নভাবে সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা বাইরে থেকে হচ্ছে, ভেতর থেকেও হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারে জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করা, ৩০০ আসন থেকে বাড়িয়ে ৪০০ করা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের বয়স ২১ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাব রাখা হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও ক্ষমতা কমানোর।
আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচন প্রসঙ্গও। বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের কাজ দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঠিক হবে না। জরুরি সংস্কার শেষে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করাই এই মুহূর্তে জরুরি।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত তিনটি দায়িত্ব। স্বৈরাচার যাতে আর ফিরতে না পারে, তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার করা। যারা অন্যায় করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করা। আর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এ তিনটা একটা আরেকটার প্রতিবন্ধকতা নয়, একসঙ্গে সমান্তরালে চলতে পারে। নির্বাচনের জন্য কিছু সংস্কার এখনই করতে হবে। কিছু নির্বাচনের পরে করলেও হবে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও দায়বদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকার দরকার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘যৌক্তিক কতগুলো সংস্কার হলে আমাদের নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। রাজনৈতিক দল ছাড়া আপনি দেশ চালাতে পারবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকেই রিফর্ম করতে হবে।’
এমআর