আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে প্রক্সি ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়রাই প্রক্সি ভোটার হতে পারবেন। রক্ত সম্পর্ক নেই এমন কেউ প্রক্সি হিসেবে অন্যের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা পাবেন না।
নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ঢাকা মেইলকে নিশ্চিত করেছেন ইসির একাধিক কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
ইসি কর্মকর্তা বলছেন, এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও প্রাথমিকভাবে কমিশন আত্মীয়দেরই এই ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে ইসি। পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ, কন্যা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়রা প্রক্সি ভোটার হতে পারবেন। এক্ষেত্রে অ্যাপের মাধ্যমে ভোটদাতা প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন করে সেখানে একজনকে তার ভোট দেওয়ার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেবেন। সেই ব্যক্তি প্রক্সি হিসেবে নিজের ভোটের পাশাপাশি অন্যের ভোটটাও দিতে পারবেন।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসী ভোটার প্রকৃত তথ্য যদিও নেই৷ তবে যে ৪৪ মিশন থেকে আমরা তথ্য নিয়েছি সেখানে এক কোটি ৩২ লাখের মতো তথ্য রয়েছে। যদি ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধরে নিই, তবে ভোটার তো এক কোটি৷ যাদের ভোটার তালিকায় নাম আছে তারাই কেবল প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন। এজন্য ৪০টি দেশে আমরা ভোটার কার্যক্রম চালাব, তবে আগামী নির্বাচনের আগে কতটুকু পারব জানি না।
তিনি বলেন, একজন ইনডিভিজ্যুয়াল ভোটারকে তার আস্থার ব্যক্তিকেই নির্বাচন করতে হবে৷ কেননা, তার প্রক্সি যে হবে সে যদি অন্য কাউকে ভোট দিয়ে দেয়। আমাদের আস্থার ঘাটতি, বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। তবে একজন ব্যক্তিকে অন্তত পক্ষে তো আস্থায় রাখতে হবে। এটা ব্যক্তির পছন্দ হবে। তিনিই নিজেই পছন্দ করবেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রক্সি ভোটের জন্য আগামী ৮ বা ৯ এপ্রিল একটা কর্মশালা হবে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইএসটিকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরেও যে কোনো প্রতিষ্ঠান এ কাজে সহায়তা করতে পারে। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বিশেষজ্ঞদেরও আমন্ত্রণ জানাবে ইসি। এছাড়া একটি সিস্টেম আর্কিটেকচার ডেভেলপের জন্য ইসির সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এবং এনজিওকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন-
ইসির কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এইসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এই সব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছে সৌদি আরবে, ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫০০ জন।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াল ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ চলমান রয়েছে। এতে আরও কয়েক লাখ ভোটার আগামী জুনে তালিকায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে ইসি।
এমএইচএইচ/ইএ

