লিবিয়ায় ভয়ংকর মানবপাচার ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে ফখরুদ্দিন নামে একজনকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়াও তাকে বিমানবন্দর থেকে কৌশলে পালাতে সহায়তার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ট্রাফিক হেলপার শওকত আলী নামে একজনকেও আটক করা হয়েছে।
ফখরুদ্দীন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের লিবিয়ায় পাচার, আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে জড়িত এই পাচারচক্রের প্রধান বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৬ মার্চ) বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে ইজিপ্টএয়ার (MS970) ফ্লাইটে কায়রো থেকে ঢাকায় পৌঁছালে খবর পেয়ে তাকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় আশিকুর রহমান সুমন নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। মাফিয়া ফখরুদ্দিন তার ক্যাম্পে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় শেষে অন্য মাফিয়ার কাছে বিক্রি করা ১৬ ভুক্তভোগীর স্বজনরা উপস্থিত আছেন বিমানবন্দর থানায়।
ফখরুদ্দিন ও তার চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের প্রলোভনে অভিবাসীদের লিবিয়ায় পাচার করতেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে লিবিয়ায় গিয়ে নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হন। চাকরির বদলে পাচারকারীরা তাদের বন্দিশিবিরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালাতেন।
পাচারের শিকার হয়ে ফিরে আসা একজন ভিকটিম আশিকুর রহমান সুমন জানান, তাদের ছোট্ট একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। দিনে একবার পচা খাবার দিত, পানি পর্যন্ত দিত না। যারা পরিবারের কাছ থেকে টাকা আনতে ব্যর্থ হতো, তাদের লোহার রড দিয়ে পেটানো হতো। অনেককে বিদ্যুতের শক দেওয়া হতো।
বিজ্ঞাপন
সুমনসহ কয়েকজনকে ফখরুদ্দিন মুক্তিপণ আদায়ের পরও বিক্রি করে দেয় অন্য এক চক্রের কাছে। সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও তার ১৬ সহযাত্রী এখনো বন্দি।
ফখরুদ্দিনের চক্র তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে নির্যাতনের লাইভ ভিডিও পাঠাতেন, যাতে স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত মুক্তিপণের টাকা পাঠায়। কিন্তু টাকা পাঠানোর পরও তাদের মুক্তি দেওয়া হতো না। তাদের আবার নতুন মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করা হতো।
কায়রো বিমানবন্দরে আকস্মিকভাবে ফখরুদ্দিনের মুখোমুখি হন সুমন। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দ্রুত তার ছবি তুলে লিবিয়ায় আটকে থাকা অন্য ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠান। পরিবার থেকে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলে বিমানবন্দরে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা গোয়েন্দারা ফখরুদ্দিনকে আটক করেন।
ফখরুদ্দিনসহ আটকরা বর্তমানে বিমানবন্দর থানায় আছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
ফখরুদ্দিনের ক্যাম্প থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পরও ১৬ বাংলাদেশি এখনো লিবিয়ার বেনগাজির একটি বন্দিশিবিরে আটকে আছেন। বন্দি থাকা ব্যক্তিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার কাজ করছে।
এমআইকে/এএস