রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশের ওপর বাম সংগঠনগুলোর হামলা নিয়ে কথা বলেছেন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এসি (রমনা জোন) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন পিপিএম। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন তিনি।
এসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ১১ মার্চ বাম সংগঠনগুলো ‘ধর্ষণ ও নিপীড়ন প্রতিরোধে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়’ অভিমুখে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করে। পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু, ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে বাম সংগঠনের কর্মসূচির একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে, পুলিশ তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চলতে সাহায্য করতে চেয়েছিল। আমরা সেখানে একটি ব্যারিকেড স্থাপন করেছিলাম, যাতে তারা নিরাপদে তাদের স্মারকলিপি পৌঁছে দিতে পারেন। আমাদের ডিসি রমনা স্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং তারা তাদের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আলোচনা চলাকালীন হঠাৎ এক ব্যক্তি পুলিশের দিকে থু থু মারতে শুরু করেন। তখন আমি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পেছনে যাই, কারণ আমি সন্দেহ করেছিলাম কোনো আউটসাইডার এসে আন্দোলনকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে।’
এসি মামুন আরও বলেন, ‘পেছনে গিয়ে আমি দেখতে পাই আরও কিছু ব্যক্তি পুলিশকে লক্ষ্য করে লাঠি ও হেলমেট ছুড়ে মারছে, এমনকি পুলিশের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটও ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে। একপর্যায়ে এক ব্যক্তি বড় ইট ছুড়ে মারতে থাকে। আমি তখন তাকে থামানোর চেষ্টা করি। তাকে জিজ্ঞাসা করি, ‘ভাই, ইট মারছেন কেন? এখানে তো আলোচনা হচ্ছে এবং আপনারা স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছেন।’ তবে, ঠিক তখনই কয়েকজন আমাকে আক্রমণ করতে শুরু করে।’
তিনি আরও জানান, ‘এক সাদা পোশাক পরা নারী এবং এক তরুণ আমাকে আক্রমণ করে, যার ফলে আমি আত্মরক্ষার্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করি। আমি বুঝতে পারলাম, তারা সম্ভবত আমাকে টার্গেট করেছিল। একপর্যায়ে আমার মাথায় একটি ঘুষি লাগে, এরপর আমি পড়ে যাই। আমার হাঁটুর চামড়া উঠে যায়। তবে, আমি কোনোভাবেই সঠিক সময়ে রেসকিউ পাওয়ার পর বেঁচে যাই এবং চিকিৎসা নিয়েছি। এখন আমি ব্যান্ডেজ অবস্থায় আছি।’
এসি মামুন আরও বলেন, ‘মিডিয়াতে কিছু ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে— আমি সাদা পোশাক পরা ওই নারীর চুল ধরেছি। আমি সবার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার করতে চাই, সেই সময় আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল এবং আমি তাকে থামানোর চেষ্টা করছিলাম। আমি কল্পনাও করতে পারি না, কোনো নারী বা পুরুষের গায়ে আমি হাত তুলবো। ঘটনাক্রমে, ওই সময়ে আমার হাত এক মুহূর্তের জন্য মুষ্টিবদ্ধ ছিল, কিন্তু আমি কোনো অবস্থাতেই তাকে আঘাত করিনি।’
বিজ্ঞাপন
এসি আবদুল্লাহ আল মামুন ঘটনাটি সম্পর্কে আরও বলেন, ‘আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কাজ করি। আমার পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমি কখনও কাউকে আঘাত করার চেষ্টা করব না, বিশেষ করে নারীদের প্রতি। ঘটনাটি কিছুটা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তবে আমি নিশ্চিত, আমি কখনও কোনো মহিলা বা পুরুষের প্রতি সহিংস আচরণ করিনি।’
এসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পুলিশ বাহিনী সবসময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দায়িত্বশীলভাবে কাজ করে থাকে এবং তাদের কাছে সবার নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্য থাকে। তিনি দাবি করেন— সংঘর্ষের ঘটনা একটি অস্থির পরিস্থিতির ফলস্বরূপ ঘটে, যা কিছু লোকের উস্কানির কারণে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবার দায়িত্ব একে অপরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে মেলামেশা করা এবং সহিংসতা পরিহার করা। আমরা অবশ্যই গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্মান করি, তবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পাশাপাশি কোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছি।’
এসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সংঘর্ষের পর তার ওপর যে আক্রমণ হয়েছে, তাতে তিনি আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর প্রতি সকলের শ্রদ্ধা ও সমর্থন থাকা উচিত, এবং আমি আশাবাদী যে এই ধরনের সহিংস ঘটনা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি হবে না।’
এর আগে, মঙ্গলবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে— ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার নামে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী পুলিশের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে।
ডিএমপি জানায়, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নারী-পুরুষসহ ৬০-৭০ জনের একটি বিক্ষোভকারী দল প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে বাধা দেয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধ উপেক্ষা করে তারা নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে।
এতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধ মানেনি, বরং তারা পুলিশের ওপর উদ্ধত ও মারমুখী আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে নারীদের নখের আঁচড়ে পুলিশ সদস্যরা আহত হয় এবং এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর হঠাৎ করেই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়—যা সুপরিকল্পিত বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই হামলায় রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন গুরুতর আহত হন। এছাড়া, রমনা ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম, দুই নারী পুলিশ সদস্য ও তিনজন পুরুষ কনস্টেবলও আহত হন।
পুলিশের দাবি— পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্য ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। তবে, যেভাবে একটি বিশেষ গোষ্ঠী এই আন্দোলনের আড়ালে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে, তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই উসকানিমূলক হামলার পেছনে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। নেটিজেনরা বলছেন, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নাম করে একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছে। অতীতেও এই গোষ্ঠী এমন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছিল।
এইউ