অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ভেতর থেকে চাপের কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। কারণ আজ ও গতকাল, দুই দিনে দুই দফায় প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আমিনুল ইসলামকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। খবর বিবিসি বাংলার।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে এই প্রথম চাপের কারণে বা শীর্ষ পর্যায় থেকে বলার পর ওই সরকারের কারও পদত্যাগের ঘটনা ঘটলে। অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন গত নভেম্বরে।
বিজ্ঞাপন
যদিও আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। যেখানেই থাকি শিক্ষা ও বিজ্ঞানের জন্য কাজ করে যাব।’
তবে প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ সহকারীর পদত্যাগের ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়েই নানা আলোচনা চলছিল অনেক দিন ধরে। বিশেষ করে, এ বছরের তিন মাস চলছে, কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে সব বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও পৌঁছানো নিয়ে বিশৃঙ্খলার খবর এখনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। মন্ত্রণালয়টির দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগও উঠছে।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উপদেষ্টা হিসেবে এবং বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় দুজনের মধ্যে সম্পর্কের এক ধরনের টানাপোড়েন ছিল।
তারা বলছেন, আলোচনা-সমালোচনার মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল সরকার। এতে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তার হাতে শুধু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয় সপ্তাহ দুয়েক আগে।
এই প্রক্রিয়ায় আমিনুল ইসলামকে বিশেষ সহকারীর পদ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হবে, এমনটা তাকে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছিল। তিনি সেজন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েছিলেন বলেও তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সি আর আবরারকে। তিনি গত ৫ মার্চ নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
কিন্তু আমিনুল ইসলাম উপদেষ্টা হিসেবে জায়গা না পেলেও এতদিন বিশেষ সহকারীর পদে বহাল ছিলেন। পরপর দুদিন প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। ফলে তিনি আজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আমিনুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের চাপের কারণে তাকে উপদেষ্টা করার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি। শেষপর্যন্ত তাকে বিদায় নিতে হলো। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব সফিকুল আলমও আজ প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশেষ সহকারীর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কোনো কারণ বলেননি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দুই পদের পুরোনো দুজনকেই সরে যেতে হলো। এখন নতুন উপদেষ্টা সি আর আবরার কাজ শুরু করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা বা বিশেষ সহকারীর এভাবে পদত্যাগের ঘটনা এর আগে ঘটেনি।
যদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে। কোনো কোনো উপদেষ্টার দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সেটি ছিল রাজনৈতিক কারণে। তিনি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্বে এসেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
জেবি