শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

টিপু হত্যা: ওমানে গ্রেফতার মুসাকে আনা হয়েছে দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২২, ১১:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

টিপু হত্যা: ওমানে গ্রেফতার মুসাকে আনা হয়েছে দেশে

মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাকে দেশে আনে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে একটি ফ্লাইটে মুসাকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন মতিঝিল ডিবির একটি টিম।


বিজ্ঞাপন


এর আগে বুধবার গভীর রাতে মুসাকে নিয়ে ওমান থেকে রওনা হন বাংলাদেশ পুলিশের তিন কর্মকর্তা। ওমানে মুসা আটক হওয়ার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সমঝোতায় তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

মুসাকে আনতে ওমানে যান ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন।

আলোচিত টিপু হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তে মুসার নাম আসার পর তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ। তবে ওমানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। দুই দেশের সম্পর্ক ও বিভিন্ন চুক্তির ভিত্তিতে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মুসা প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পালিয়ে যান। সেখান থেকে যান ওমানে। ইন্টারপোলের দেয়া তথ্যে গত ১৭ মে মুসাকে আটক করে ওমান পুলিশ। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডিবি ও এনসিবির তৎপরতায় মুসাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।


বিজ্ঞাপন


এডিসি শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, ইন্টারপোলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ দুবাই পুলিশের মাধ্যমে মুসাকে আটকের চেষ্টা শুরু করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুবাই থেকে ওমানে চলে যান তিনি। পরে ওমান পুলিশের মাধ্যমে মুসাকে শনাক্ত করে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়।

রিপন বলেন, আলোচিত হত্যা মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে শুটার মাসুমের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায় মুসার নাম আসে।

পুলিশ দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর দায়িত্বে থাকা (এআইজি) মহিউল ইসলাম ঢাকা মেইলকে জানান, মামলাটি ডিবির হওয়ায় তাকে ডিবির হাতে হস্তান্তর করা হবে।‌ এরপর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় গাড়িতে থাকা অবস্থায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপুকে এলোপাতাড়ি গুলিতে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কলেজছাত্রী প্রীতিও মারা যান। পরদিন টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি মামলা করেন।

এই মামলায় বগুড়া থেকে শ্যুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করে ডিবি। পরে আরফান উল্লাহ দামাল নামে আরও একজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেফতারের কথা জানায় র‌্যাব।

ঘটনা তদন্তে র‌্যাব মুসার সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। তিনি মূলত রাজনীতি ও অপরাধজগতের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢাকা ও দুবাইয়ের অপরাধজগতের মধ্যে সংযোগের সমন্বয় করতেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগেই মুসা দুবাই চলে যান। সেখান থেকেই মূলত হত্যা পরিকল্পনা এবং যাবতীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে পলাতক পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম দুই সহোদর প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী হিসেবে অপরাধ জগতে পা রাখেন মুসা। দুর্ধর্ষ হওয়ার কারণে অল্প দিনেই মুসাকে কিলার বাহিনীতে কাজে লাগায় বিকাশ।

মিরপুরের একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি হন মুসা। বোছা বাবু হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান মতিঝিলের ওমর ফারুক। কারা অভ্যন্তরেই মুসার সঙ্গে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয় ফারুকের।

ফারুক জামিনে বের হওয়ার পর মুসাও জামিন পান। তবে জামিনে বের হয়ে মুসা আর মিরপুর এলাকায় ফেরেননি। ওমর ফারুক ও বিকাশের আরেক বন্ধু হাসানের শেল্টারে এজিবি কলোনি এলাকায় যাতায়াত করেন। এজিবি কলোনি ও শাহজাহানপুর এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা থেকে মাসিক হারে টাকা পেতেন মুসা।

২০১৬ সালে মুসার নেতৃত্বেই মুসার ভাই সালেহ বোছা বাবুকে হত্যা করে। বাবু হত্যা মামলায় মুসা গ্রেফতারও হয়। পরে জামিনে বেরিয়ে আসে। এবারও এই মুসাই মাসুম ওরফে আকাশকে টিপু হত্যায় কাজে লাগায়। নিজের ভাই সালেহকেও কাজে লাগায় হত্যাকাণ্ডে।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর