দীর্ঘসময় ধরে গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে চললেও বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর সাজা মওকুফ হওয়ায় বিদেশে যাওয়ার পথ পরিষ্কার হয় তারা। শারীরিক নানা ঝক্কি-ঝামেলা শেষে বিদেশযাত্রার দিনে নেতাকর্মীদের ঢল নামবে আগে থেকেই এমন আশঙ্কা ছিল। যে কারণে দলের পক্ষ থেকে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে খালেদা জিয়াকে বিদায় দেওয়ার সময় সড়কে যানবাহন আটকে না দাঁড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা তোয়াক্কা করেননি নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়া উপলক্ষে তাই বিমানবন্দরগামী সড়কে চলাচল করা সাধারণ মানুষকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ভোগের কথা শেয়ার করে বিরক্তি প্রকাশ করেন। ক্ষুব্ধ এসব মানুষের অনেকে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধও করেছেন।
বিজ্ঞাপন
রাত আটটার দিকে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে রওনা হয়ে গাড়িতে করে রাত পৌনে ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এর এক ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১২টার দিকে কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি প্রধান।
কিন্তু খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই নেতাকর্মীরা গুলশানে জড়ো হন। গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পুরো সড়কে মিছিলসহ নেতাকর্মী কোথাও সড়কের ওপরে, কোথাও ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় জানান। কোথাও আবার নেতাকর্মীরা মোটর শোভাযাত্রাও করেন। এতে করে আশপাশের সড়কসহ বিমানবন্দরে দিকে যাওয়া আসার দুইদিকের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে যানজটে বসে থেকে অনেকে বিরক্ত হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিশেষ করে নারী-শিশু ও বয়স্ক মানুষকে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। সড়কে অনেক জায়গায় অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে ক্ষোভের কথা জানিয়ে রাত আটটার দিকে একজন লিখেছেন, সন্ধ্যা ৬.৪৫ এ বাসে উঠেছি কাকলি থেকে। এখনো বনানী ফ্লাইওভারে। একজন মানুষ বিদেশ যাবে তার জন্য যদি এভাবে রাস্তা বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে যে নেক্সট ইলেকশানে আমরা কাদের হাতে দেশটা তুলে দিতে যাচ্ছি।
আরেকজন লিখেছেন, কর্মীরা বিদায় দিতে রাস্তার যে অবস্থা, পাইলট রাগ করে চলে না গেলে ই হয়!
এমন পদ্ধতি বদলে ফেলার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন লিখেছেন, আপনাদের রাজনীতির জন্য সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পরে সেটা কি আপনারা বোঝেন না? আপনারা নাকি জনগণের জন্য রাজনীতি করেন? তাহলে জনগণ কেন ভোগান্তি পোহায় আপনাদের জন্য? আজ পুরা ঢাকা ব্লক!
অন্য একজন লিখেছেন, কত অ্যাম্বুলেন্স আটকে আছে। হায় বাংলাদেশ ৪০ মিনিটের রাস্তা সাড়ে ৪ ঘণ্টা লাগলো।
এমন দুর্ভোগের প্রভাব ভোটে পড়বে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, কোন একটি দলের শতভাগ ভোট বা জনপ্রিয়তা আজকেই শেষ হলো। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দেখার জন্য ছাত্ররা জীবন দেয়নি। অসংখ্য মা, বোন রাস্তায় জ্যামে অ্যাম্বুলেন্সে কষ্ট করতেছে। কী জ্যাম।
কী নির্দেশনা দিয়েছিল বিএনপি
গতকাল সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার কথা জানিয়ে তাকে বিদায় জানানোর সময় সড়কে পথচারী ও যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দিবাগত রাত ১২টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ৮টায় তার গুলশানের বাসা থেকে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রওয়ানা হবেন। রাত ৯টায় তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ছেড়ে যাবেন। এ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি এবং সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দেশনেত্রীকে বিদায় জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। যাতে রাস্তায় যানবাহন ও পথচারী চলাচলে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। এবিষয়ে নেতাকর্মীদের যথাযথভাবে নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিইউ/এমআর